মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫২ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে হাওর রক্ষা বেরীবাঁধ নিয়ে চলছে তুঘলকি কারবার। সরকার নির্ধারিত কাজের সময় পেরিয়ে গেলেও অনেক বেরীবাধঁ সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী নির্মিত হয়নি। দায়সাড়া মাটি ফেলে অনেক পিআইসি মোটা অংকের টাকা লুটপাট করছে। অথচ এরই মধ্যে পিআইসিদের ৬০% টাকা প্রায় ৩ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। হাওরের বেরীবাধঁ কে কেন্দ্র করে এখানে গড়ে উঠেছে একটি সিন্ডিকেট এরা স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের সাথে আতাত করে মোটা অংকের টাকা ভাগিয়ে নিয়ে নাম মাত্র কাজ করে মোটা অংকের টাকা লুটপাট করছে। অভিযোগ রয়েছে, বিচার হীনতার কারণে প্রতি বছরেই সরকারি টাকা লুটপাট করে দুর্নীতিবাজরা পার পেয়ে যাচ্ছে। ঘুরে ফিরে প্রতি বছর একই লুটেরাদের বেরীবাধেঁর কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়। জানা যায় এবার উপজেলার হাওর রক্ষায় ৩১কি.মি. বাধঁ নির্মাণে ৫ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। গঠন করা হয়েছে ৫০ টি পিআইসি (প্রজেক্ট বাস্তবায়ন কমিটি)। পিআইসি গঠনে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তা উপ সহকারী প্রকৌশলী হাসান গাজীর বিরুদ্ধে মোটা অংকের বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলার চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়নের মেম্বার হিরা মিয়া সোমবার সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক বরাবরে এব্যাপারে লিখিত অভিযোগ করেন। লিখিত অভিযোগে হিরা মিয়া মেম্বার বলেন, এবারও সরকারি নীতিমালা লংঘন করে স্থানীয় জন প্রতিনিধিদের বাদ দিয়ে স্থানীয় পাউবো কর্মকর্তারা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নিজস্ব লোক দিয়ে পিআইসি গঠন করে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি মূলক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। আমি উপজেলার চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়নের নলূয়া ও মই হাওরের মাঝামাঝি রসুলপুর গ্রামের বাসীন্দা। দুইটি হাওরেই আমার প্রায় ৬০ (ষাট) কেদার জমি রয়েছে। আমি ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যও বটে। আমাকে সভাপতি করে পিআইসি কমিটি করার কথা থাকলেও স্থানীয় পাউবো উপ-সহকারী প্রকৌশলী হাসান গাজী মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পাশর্^বর্তী কবিরপুর গ্রামের আহমদ আলীকে সভাপতি করে একটি পিআইসির মাধ্যমে ২৩ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু পুরাতন বেরীবাধেঁর মাটি কুড়েঁ ও নাম মাত্র মাটি ফেলে মোটা অংকের টাকা আত্মসাৎ করা হচ্ছে। অন্যদিকে ১নং ওয়ার্ডের রনধির দাশ নান্টু ও তার আপন ছোট ভাই সুশীল দাসকে সভাপতি করে দুইটি পিআইসির মাধ্যমে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দিলেও দায় সারা কাজ করে সরকারি বরাদ্দ আত্মসাৎ করা হচ্ছে। এদিকে নলুয়া হাওরের পশ্চিম প্রান্তে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বাদ দিয়ে জনৈক সাব্বির আহমদকে সভাপতি করে ৯ লক্ষ টাকার পিআইসি দিলেও এখানে দায় সারা ভাবে কাজ করা হয়েছে। এ ধরণের নানা অনিয়ম ওদুর্নীতি চলছে। ৫০ টি পিআইসি গঠন করে হাওরে ৩০ কি.মি. বেরীবাধঁ নির্মাণে সরকারি ৫ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ৫০ টি পিআইসি গঠন করলেও অধিকাংশ পিআইসি সরকারের নীতিমালা পরিপন্থি স্থানীয় কৃষক ও জন প্রতিনিধিদের পিআইসি গুলোতে না রেখে বহিরাগতদের নিয়ে উপ-সহকারী প্রকৌশলী হাসান গাজী মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পিআইসি গঠন করেন। সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী সুষ্ঠভাবে বেরীবাধঁ নির্মিত না হওয়ায় হাওরগুলো অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। এ নিয়ে স্থানীয় কৃষক সমাজ খুব দুশ্চিন্তার মধ্যে আছেন। এছাড়া অনেক অপ্রয়োজনীয় বাধঁ ব্যক্তিস্বার্থে করে মোটা অংকের টাকা লুটপাট করা হচ্ছে। অনেক পিআইসি রয়েছে উত্তোলনকৃত টাকার মধ্যে অর্ধেক টাকার কাজও করা হয়নি। সুষ্ঠু তদন্ত হলে অনেক অনিয়ম ও দুর্নীতি ধরা পড়বে।
সোমবার নলুয়া হাওর সরেজমিন পরিদর্শন কালে স্থানীয় অনেক কৃষকদের সাথে আলাপ হয়।
হাওরপাড়ের চিলাউড়া গ্রামের শহিদুল ইসলাম বলেন, এবার ভয়াবহ দূর্নীতি চলছে। বহুবাঁধ রয়েছে যেখানে পুরাতন বাধেঁর উপর নামমাত্র মাটি ফেলা হয়েছে। সরকার হাওর রক্ষায় বেরীবাধঁ নির্মাণে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও তা কৃষকের উপকারে আসছে না। দুর্নীতিবাজরা লুটপাট করে খাচ্ছে।
নলুয়ারহাওর পাড়ের বেরী গ্রামের কৃষক ফখরুল ইসলাম বলেন, বাঁধের নামে শুরু হয়েছে মৌসুমী বাণিজ্য। প্রতি বছর চিহ্নিত দুর্নীতিবাজরাই বাধেঁর টাকা ভাগিয়ে নিয়ে লুটপাট করে। অনেক জায়গায় সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী সঠিক মাপের বেরী বাধঁ নির্মিত না হওয়ায় আমরা কৃষকরা খুবই চিন্তার মধ্যে আছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজুল আলম মাসুম এর সাথে আলাপ হলে তিনি বলেন, অনিয়মের ব্যাপারে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা কাজে গাফলাতি করছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে পৌর কাউন্সিলর আবাব মিয়া অভিযোগ করেন, অনেক পিআইসিতে রহস্য জনক কারণে এবার স্থানীয় জন প্রতিনিধিদের রাখা হয়নি। জগন্নাথপুর উপজেলার পাউবোর দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা উপ সহকারি প্রকৌশলী হাসান গাজী এবার পিআইসি নিয়ে বাণিজ্য করেছেন।
এব্যাপারে জগন্নাথপুর উপজেলার পাউবোর দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা উপ সহকারি প্রকৌশলী হাসান গাজীর সাথে আলাপ হলে তিনি সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি কোন পিআইসির কাছ থেকে টাকা নেইনি। সঠিক নিয়মেই পিআইসি গঠন করা হয়েছে। কোনো কোনো পিআইসি স্থানীয় রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে হয়েছে বলে তিনি জানান এবং বর্তমানে হাওরের বাধেঁর কাজ চলমান রয়েছে।
Leave a Reply