বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৫:৪১ অপরাহ্ন
আখতারা মাহবুবা :: ‘আল্লাহর করুণার অন্যতম একটি নিদর্শন হল তোমাদের জন্য তোমাদের আপন সত্তা থেকেই জুড়ি সৃষ্টি করেছেন। তার থেকে তোমরা প্রশান্তি লাভ কর। আর তোমাদের বুকে ভালোবাসা ও দয়া প্রদান করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীলদের জন্য নিদর্শন রয়েছে’।
নারী ও পুরুষের বন্ধুত্ব, ভালোবাসা ও হৃদ্যতা তাদের একে অপর থেকে প্রশান্তি ও পরিতৃপ্তিকে একটি নির্দিষ্ট নিয়ম ও বিধানের আওতায় নির্ধারণ করে দিয়েছেন আল্লাহ।
আর এটাই তার জন্য উৎকর্ষ ও পূর্ণতা অর্জনের ক্ষেত্র সৃষ্টি করে। আর এ কারণেই বিবাহের বন্দোবস্ত রেখেছেন। আর যা থেকে তিনি বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সেটা হল- অনাচার, ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া থেকে।
মানুষের সব ধরনের শান্তি, উন্নতি এবং অটুট কৃতিত্বের মৌলিক উপাদান হল- দাম্পত্য জীবন। বৈবাহিকবন্ধনে স্বামী তার স্ত্রীর সঙ্গে মিলনের অধিকার লাভ করে।
ইসলাম বিবাহবন্ধনে নারী জাতিকে মর্যাদার উচ্চাসনে বসিয়েছে। কোনো ব্যক্তি কোনো কন্যার অভিভাবকের কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেবে এবং তার মোহরানা নির্ধারণের পর বিবাহ করবে।
পবিত্র কোরআনের ঘোষণা, ‘তোমরা সন্তুষ্ট চিত্তে স্ত্রীদের মোহরানা আদায় কর’। পবিত্র কোরআনের এ ঘোষণা নারীর প্রতি পুরুষের সম্মান প্রদর্শন। যে মোহরানার বিনিময়ে নারী-পুরুষ বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয় তাতে নারীর একক অধিকার।
স্ত্রীকে মোহরানা না দেয়া, দিতে গড়িমসি করা, ছলচাতুরী করা কিংবা কৌশলে স্ত্রীর মোহরানা মাপ করিয়ে নেয়া মারাত্মক গুনাহের কাজ। ইসলাম স্বামীকে স্ত্রীদের সম্পদ গ্রাস না করার জন্য নির্দেশ দিয়েছে। এমনকি মোহরানার অর্থও। তবে স্ত্রী যদি খুশিমনে তা স্বামীকে দেয় তাহলে তা নেয়া যায়, অন্যথায় নয়।
ইসলাম স্ত্রীকে স্বামীর চরিত্রের সনদ প্রদানের অধিকার দিয়েছে। এ মর্মে রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সে-ই উত্তম, যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম’। কিন্তু আজ-কালের সমাজে কোরআনের হুকুম নারীর প্রাপ্য অধিকার মোহরানা অন্ধ কুয়ায় হাবুডুবু খাচ্ছে। মোহরানার বদলে জায়গা করে নিয়েছে যৌতুক। দেশের আবালবৃদ্ধবনিতা এমন কে আছে? যে জানে না যৌতুকের নাম।
যৌতুকের উৎপাতে নারীরা আজ উদভ্রান্ত। নিম্নবিত্ত দুস্থ দরিদ্র পরিবারের নারী কন্যারা পিতৃ-মাতৃ আদর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যৌতুকের টাকা কামাতে ঝিয়ের কাজে, গার্মেন্টস ও বিভিন্ন কারখানাতে কাজ করে কষ্টার্জিত অর্থ বরপক্ষের হাতে তুলে দিচ্ছে।
বরপক্ষ কনের টাকায় ঢাকঢোল বাজিয়ে বিয়ের কাজ সমাপ্ত করছে। অনেক উচ্চবিত্তরাও যৌতুকের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। কে কত বেশি যৌতুক দিয়ে বরপক্ষকে খুশি করা যায় তা নিয়ে গর্ব করছে। মধ্যবিত্ত সমাজ ‘কন্যা দায়গ্রস্ত’ পরিবার হিসেবে সমাজে ধুঁকছে।
তবে মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে পিতা-মাতার পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় উপহারসামগ্রী দেয়ার রেওয়াজ শরিয়তসম্মত। রাসূল (সা.) হজরত ফাতেমা (রা.) কে উপঢৌকন হিসেবে দিয়েছিলেন একটি পাড়ওয়ালা কাপড়, একটি পানি পাত্র এবং চামড়ার তৈরি বালিশ, যার ভেতরটা খড় ভর্তি ছিল।
যে স্বামী মোহরানার সম্মান দিয়ে স্ত্রীকে ঘরে নেন, সে স্ত্রী স্বামীর পরিবারে এসে সবাইকে সম্মানের দৃষ্টিতে দেখেন। আর যে স্বামী কোরআনের বিধান অমান্য এবং নৈতিক স্খলন ঘটিয়ে যৌতুক নিয়ে স্ত্রীকে ঘরে তোলেন মনস্তাত্ত্বিকভাবে সেই স্ত্রী অকুতোভয় হয়। রাসূল (সা.) বলেন, ‘তোমরা তাদের ধন-মালের লোভে পড়ে বিবাহ করবে না, কেননা এ ধন-মাল তাদের বিদ্রোহী ও অনমনীয় বানাতে পারে’।
কোনো জিনিস হালাল হতে পারবে না সেসব ছাড়া যেগুলোকে আল্লাহ হালাল ঘোষণা করেছেন। আর কোনো জিনিস হারাম হবে না সেসব ছাড়া যেগুলোকে আল্লাহ হারাম ঘোষণা করেছেন। অর্থাৎ হালালও স্পষ্ট এবং হারামও স্পষ্ট।
হারাম যৌতুকের মাধ্যমে যে পরিবার গড়া হয় সে পরিবারে অশান্তির ডালপালা সব সময় মহীরূপ ধারণ করবে এটাই স্বাভাবিক। বিশুদ্ধ দ্বীন ধারণ করে নৈতিক ভিত মজবুত করে, শান্তিময় পরিবার ও সুন্দর সমাজ গঠনের জন্য সর্বস্তর থেকে যৌতুককে হারাম ও ঘৃণা করা খুব জরুরি।
তা না হলে সমাজ তথা পরিবারের শান্তি ও শৃঙ্খলা কখনও প্রতিষ্ঠিত হবে না। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই বিশুদ্ধ জ্ঞান অর্জন করার এবং এর ওপর আমল করার তৌফিক দান করুন।
লেখক : প্রাবন্ধিক
Leave a Reply