।। সায়েক এম রহমান।।
৫ আগষ্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি অবিস্মরনীয় দিন। একটি বিজয়ের দিন, একটি মুক্তির দিন, দীর্ঘ ১৬ বছরের আওয়ামী ফ্যাসিজমের কবল থেকে মুক্ত হওয়ার দিন, একটি মহা- উল্লাসের দিন।
যেদিনে ছাত্র – জনতার এক অবিশ্বাস্য গণআন্দোলন তৈরি হয়েছিলো। সারাটা জুলাই মাস ছাত্র -জনতার মিছিলে মিছিলে উত্তাল ছিলো সমগ্র বাংলাদেশ। টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া, বান্দরবন থেকে সুনামগঞ্জ, লন্ডন থেকে নিউইয়র্ক, বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রাম গঞ্জ থেকে শুরু করে, বিশ্বের বড় বড় শহরে দাবানলের মতন ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিলো গণআন্দোলন। সেদিন সেই আন্দোলনের মূল নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্ময়করা, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন নাহিদ, হাসনাত আবদুল্লাহ ও শারজিস গংরা। তারা লড়াকু জাতিকে উজ্জীবিত করে ফ্যাসিষ্টের রক্তচক্ষুকে তোয়াক্কা না করে অধিকার আদায়ের সংগ্রামে জীবন উৎসর্গ করার প্রত্যয় নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে, ঝাঁপিয়ে পড়ে সাধারণ মানুষ, এই বিপ্লব রুপান্তরিত হয়ে যায় ছাত্র জনতার মহা বিপ্লবে। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ হয়ে দাঁড়ায় এক অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশ। নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পর গত চৌত্রিশ বছরে এমন অগ্নিগর্ব বাংলাদেশ দেখেনি এই জাতি। যখন আবুসাঈদ ও মুগ্ধরা শহিদ হলেন তখন লক্ষ কোটি ছাত্র জনতা শ্লোগান তুলে স্টেপ ডাউন হাসিনা,,, লাশের ভিতর জীবন দে নইলে গদি ছেড়ে দে।
এ যেন আরেক এক একাত্তর! স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর আরেক স্বাধীনতার সাধ জেগে উঠলো! আজ যেন সারা জাতি একাত্ম! দলমত নির্বিশেষে সবাই ফ্যাসিষ্টের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে। মরণ নিয়ে কোন চিন্তা ই করছেনা, পুলিশের চলন্ত গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে স্কুল ছাত্রছাত্রী,হেলিকপ্টারের গুলি ও তোয়াক্কা করছেনা,।তাদের সমস্ত শরীরের শক্তি দিয়ে রুখে দিচ্ছে বিভিন্ন গাড়ির গতিপথ। পুলিশের তাজা গুলির মুখে বুক টান করে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে আবুসাঈদ মুগ্ধ দের মত শত শত অকতোভয় ছাত্র ছাত্রী। সেনা বাহিনীর চোখে চোখ রেখে বাঘের মতন গর্জন করে বলছে, “বুকের ভিতর ভীষণ ঝড় পারলে তুরা গুলি কর”।
এক পর্যায়ে ছাত্রজনতার গণবিস্ফোরণের মুখে ৫ আগস্ট বেলা ১১ টার দিকে বোন রেহেনাকে নিয়ে গণভবন ছাড়েন ফ্যাসিষ্ট শেখ হাসিনা। অতঃপর বহু কাঙ্ক্ষিত মুক্তির আনন্দ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে সারা দেশে বিদেশে শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেন পার্শবর্তী দেশে । সেনাপ্রধানের ভাসনের অপেক্ষা না করেই মুক্তির আনন্দ মিছিল দেশের গ্রাম গঞ্জ থেকে শুরু বিশ্বে বড় বড় শহরে ছড়িয়ে পড়ে। অতঃপর ২০২৪ সালের ৫ আগষ্ট বেলা ৩ ঘটিকায় ফ্যাসিষ্টের পতন হয় এবং জাতির একটি চূড়ান্ত বিজয় অর্জন হয়।
লেখক : লেখক ও কলামিস্ট
সহ সভাপতি
বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সমিতি,
উপদেষ্টা সম্পাদক
জনতার আওয়াজ ডটকম।
Leave a Reply