শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২৪ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
সেমিনারে তারেক রহমান; আগামীর বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রীও স্বেচ্ছাচারী হতে পারবে না জগন্নাথপুরে কিশোর হত্যা মামলার প্রধান আসামীসহ গ্রেপ্তার ২ ৩য় বারের মতো জগন্নাথপুর উপজেলা জামায়াতের আমীর নির্বাচিত হলেন মাওলানা লুৎফুর রহমান জগন্নাথপুরে মসজিদ কমিটি কে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংর্ঘষে বৃদ্ধ নিহত, আহত ৩৫ যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতা হুমায়ুন কবির ও এম এ ছাত্তার এর স্বদেশ আগমন সিলেটে মুনতাহা হ ত্যা কা ণ্ড : চাঞ্চল্যকর তথ্য দিল পুলিশ জগন্নাথপুর প্রেসক্লাবে  দ্বিতীয় ধাপে প্রাথমিক সদস্যপদ প্রদান জগন্নাথপুরে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার জগন্নাথপুরে কিশোরকন্ঠ মেধাবৃত্তি -২৪ সম্পন্ন জগন্নাথপুরে জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে জনশক্তি সমাবেশ

জগন্নাথপুরে করোনার প্রাদুর্ভাব : অনেকেই মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি

জগন্নাথপুরে করোনার প্রাদুর্ভাব : অনেকেই মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি

আমিনুল হক সিপন ::

একদিকে মহামারী কোভিড-১৯ আতংক আর অপরদিকে টানা লকডাউনে শঙ্কায় জগন্নাথপুরের ব্যবসায়ী ও নিম্ন আয়ের লোকজন।  তবে সর্বাত্মক  লক ডাউন লক্ষ্যনীয় হলেও প্রশাসন এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর আড়ালে অনেকেই মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি । ফলে জগন্নাথপুরে আবারও করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। পিসিআর ল্যাবের পরীক্ষায় জগন্নাথপুরে প্রতিদিনই করোনা সংক্ররণের হার বাড়ায় আতংকে রয়েছেন স্থানীয় সচেতনেরা। আর ভবিষ্যত কেমন হবে? তা নিয়েও চিহ্নিত জগন্নাথপুরের ব্যবসায়ী এবং মধ্য-নিম্ন আয়ের লোকজন।

সম্প্রতি দেশে কোভিড-১৯ এর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় ও ভারতীয় ধরণ সনাক্ত হওয়ায় সরকার ফের লক ডাউন বাস্তবায়ন করলে জগন্নাথপুরেও কঠোর লক ডাউন পালিত হচ্ছে। চলতি লক ডাউনে স্থানীয় প্রশাসন, সেনা ও পুলিশ বাহিনীর সমন্বয়ে ব্যাপক নজরদারি রয়েছে জগন্নাথপুর উপজেলার প্রত্যন্ত স্থানে। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান, ফার্মেসী কিংবা জরুরী সার্ভিসের বাইরে অন্যান্য ব্যবসায়ীদের জরিমানা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসন,সেনা ও পুলিশ বাহিনী সমন্বয়ে পৌর শহরে সচেতনতামূলক  মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। তবে উপজেলা প্রশাসন,সেনা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় উপজেলার সচেতন মহল সন্তুষ্ট হলেও তাদের আড়ালে স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না অনেকেই। অসচেতন লোকদের মাস্কবিহীন যত্রতত্র চলাফেরা, পাঁড়া-মহল্লা ও অলি-গলিতে দল বেঁধে আড্ডা, নিত্য প্রয়োজনীয় দোকান গুলোতে ব্যবহার করা হচ্ছেনা হ্যান্ড স্যানিটাইজার।  স্থানীয় সচেতনেরা জানান, চলতি লক ডাউনে করোনা বিরোধী মোকাবেলায় স্থানীয় প্রশাসন, সেনা ও পুলিশের কঠোর তৎপরতা লক্ষ্যনীয়। জনসচেনতার জন্য রয়েছে তাদের অগ্রণী ভূমিকা। তবে লক ডাউনের পাশাপাশি সঠিক নিয়মে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে করোনার প্রকোপ থেকে হয়তো আমরা রক্ষা পেতে পারি।

গত ১০ জুলাই) সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তির ল্যাব থেকে নমুনা পরীক্ষার জগন্নাথপুরের ৫৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করলে একদিনে ৩৪ জন করোনাভাইরাসে শনাক্ত হয়েছেন।

জগন্নাথপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গত ১০ জুলাইয়ের তথ্যে জানা যায়, ঐ তারিখ পর্যন্ত জগন্নাথপুর উপজেলায় ৩১৪জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তন্মধ্যে সুস্থ আছেন ২৪৭ জন, মৃত্যু বরণ করেছেন ২ জন।  হোম আইসোলেশনে রয়েছেন ৬২জন এবং ৩জন  জগন্নাথপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছেন।

এদিকে, জগন্নাথপুরের বিভিন্ন স্থানে আবার ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় আতংকিত স্থানীয়রা। কখন কে ভাইরাসে আক্রান্ত হয় তা নিয়ে রয়েছে তাদের উদ্বেগ-দুঃচিন্তা। সম্প্রতি জগন্নাথপুরের আরো কয়েকজনের অকাল মৃত্যু হওয়ায় করোনায় মৃত্যু বলে মনে করছেন কেউ কেউ। এমতাবস্থায় ব্যবসায়ী ও মধ্য-নিম্ন আয়ের লোকেরা রয়েছেন বিপাকে। আর দীর্ঘমেয়াদি লক ডাউনের দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে তাদের কপালে।

প্রসঙ্গত, দেশব্যাপী করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ার কারণে সরকার গত ১ জুলাই থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত এক সপ্তাহের কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে। সেই মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আবারো ১৪ জ্লাই পর্যন্ত একসপ্তাহের সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণা করা হয়।

শাবিপ্রবি ইংরেজি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী এম. শামীম আহমেদ বলেন, “বৈশ্বিক অর্থনীতি মন্দাবস্থায় করোনা আমাদের দূর্ভোগ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে লক ডাউনে ব্যবসায়ী ও নিম্ন-মধ্য আয়ের লোকেরা হারাচ্ছে তাদের পুঁজি। নিজেরা সচেতন হলে হয়তো আমরা একদিন সুন্দর পৃথিবী দেখবো।”

স্টুডেন্ট কেয়ার জগন্নাথপুরের সেক্রেটারী আমিনুর রহমান হিমেল বলেন, “আমরা নিজেরা সচেতন হলে করোনার প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে পারি”

জগন্নাথপুর বাজারের ট্রেইলারিং ব্যবসায়ী সাব্বির আহমেদ বলেন, “সামনে পবিত্র ঈদুল আযহা। এই কঠিন সময়ে সারাবছর তেমন মুনাফা না হলেও কাপড় ব্যবসায়ীদের জন্য দুটি ঈদ-ই ভরসা। এমন পরিস্থিতিতে আমরা নিজেরা সচেতন না হওয়ায় করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় ভয় রয়েছে।”

জগন্নাথপুর বাজারের চায়ের দোকানদার নয়ন মিয়া বলেন, “করোনার প্রথমদিকে একে অপরকে বিভিন্নভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করলেও এখন সবাই কমবেশি আর্থিক সংকটপূর্ণ। তাই ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ী ও মধ্য-নিম্ন আয়ের বিকল্প সহজ উপায় নেই। তবে আমরা নিজেরা সচেতন হলে হয়তো সকল বিপদ কাটিয়ে উঠতে পারতাম।”

জগন্নাথপুর বাজারের মোবাইল ইঞ্জিনিয়ার খালেদ মিয়া বলেন, “নিজেরা একটু সচেতন হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানলে হয়তো করোনার প্রকোপ থেকে আমরা রক্ষা পাবো; আর করোনার প্রকোপ কমলে লক ডাউন থেকেও আমরা মুক্তি পাবো।”

পত্রিকা বিক্রেতা নিকেশ বৈদ্য বলেন, “এই লক ডাউনের মধ্যে আমরা আমরা নিম্ন আয়ের লোকেরা অনেক কষ্ট করে সংসারের ব্যয় নির্বাহ করছি। এর মধ্যে রয়েছে করোনা আতংক। তবে আমরা নিজেরা সচেতন হলে সবধরণের শঙ্কা মুক্ত থাকতে পারবো।”

এদিকে, মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে জগন্নাথপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ মধুসূধন ধর বলেন, “আমরা প্রতিদিন নমুনা সংগ্রহ করে পিসিআর ল্যাবে পাঠাচ্ছি। এমতাবস্থায় জগন্নাথপুর উপজেলায় করোনা সংক্রমণের হার দিন দিন বাড়ছে। এতে আমাদের যথেষ্ঠ তৎপরতা রয়েছে। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনার বাইরে আর কোনো তথ্য দেওয়া সম্ভব নয়।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও পদ্মাসন সিংহ বলেন, “সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক করোনা সংক্রমণ রোধে জগন্নাথপুর উপজেলার প্রত্যন্ত স্থানে রয়েছে আমাদের ঘনঘন তদারকি। এ ক্ষেত্রে নিয়মিত আমাদের ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে কাজ করছে। তিনি বলেন,  রাতে ও আমাদের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। তবে জনসাধারণ সচেতন না হলে শুধুমাত্র প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে করোনা প্রতিরোধ সম্ভব নয়।

তিনি করোনা প্রতিরোধে স্থানীয় জনসাধারণের সচেতন হওয়ার আহবান জানান।”

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published.

© All rights reserved © 2017-2023 Jagannathpurnews.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com