শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১১:১৭ পূর্বাহ্ন
জগন্নাথপুর নিউজ ডেস্কঃ
প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের জ্যেষ্ঠ নেতা-মন্ত্রীরা বলেছেন, স্বাধীনতাসহ বাংলাদেশের যত কিছু অর্জন ও সাফল্য সবই এসেছে জাতির পিতার হাতে গড়া রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের হাত ধরে।
তাদের মতে, অন্য যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা দেশকে কিছুই দিতে পারেনি। কারণ তারা এদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী ছিল না, ছিল পাকিস্তনের দালাল ও তল্পিবাহক।
‘বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন নিয়ে এদেশকে স্বাধীন করেছিলেন, গত ১০ বছর ধরে তারই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই স্বপ্ন ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত দেশ গঠনে কাজ করে যাচ্ছেন। মাত্র ১০ বছরে শেখ হাসিনার ব্যাপক উন্নয়ন সারাবিশ্বকেই আলোড়িত করেছে।’
রোববার প্রথমে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং পরে ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এসব কথা বলেন।
আলোচনায় অংশ নেন- আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী ডা. আফছারুল আমীন, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী মুহাম্মদ ইমাম উদ্দিন প্রমাণিক, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, সরকারি দলের আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, সালাম মোর্শেদী, একেএম রহমতুল্লাহ, আবিদা আনজুম মিতা, নজরুল ইসলাম বাবু, নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, মোরশেদ আলম, জাতীয় পার্টির রওশন আরা মান্নান, গণফোরামের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ প্রমূখ।
আলোচনায় বাজেটের পরিবর্তে আওয়ামী লীগের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বিষয়ই প্রাধান্য পায়।
এতে অংশ নিয়ে আমির হোসেন আমু বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশকে স্বাধীন করেছিলেন বলেই আজ আমরা সংসদে বাজেট নিয়ে আলোচনার সুযোগ পাচ্ছি। আওয়ামী লীগের জন্মের মধ্যে দিয়েই দেশের স্বাধীনতার বীজ রোপিত হয়েছিল।
‘জন্মলগ্ন থেকেই আওয়ামী লীগ এদেশের আন্দোলন-সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছে। এ দেশের যত কিছু অর্জন ও সাফল্য সবই এসেছে আওয়ামী লীগের হাত ধরে, অন্য কেউ কিছু দিতে পারেনি।’
তিনি বলেন, কারণ তারা ছিল পাকিস্তানের দালাল ও তল্পিবাহক সরকার। বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন নিয়ে এদেশকে স্বাধীন করেছিলেন, গত ১০ বছর ধরে তারই কন্যা শেখ হাসিনা সেই স্বপ্ন পূরণে কাজ করে যাচ্ছেন।
‘সারাবিশ্বের মানুষ আজ জানতে চায়, শেখ হাসিনার হাতে কী যাদুর কাঠি রয়েছে যে এতো অল্প সময়ে দেশের এতো উন্নয়ন-অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে। শুধু দেশেরই নয়, সারাবিশ্বের নেত্রী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। শেখ হাসিনার উন্নয়ন সারাবিশ্বকে আলোড়িত করেছে।’
তোফায়েল আহমেদ দলের জন্মদিনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, পৃথিবীতে অনেক বড় বড় নেতা আসবেন, যাবেন, কিন্তু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর মতো নেতা কোনদিন আসবে না। তার হৃদয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ছাড়া আর অন্য কিছু ছিল না।
‘শুধু এশিয়া নয়, সারাবিশ্বের নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু। দুটি স্বপ্ন নিয়ে বঙ্গবন্ধু দেশকে স্বাধীন করেছিলেন-একটি হচ্ছে দেশের স্বাধীনতা, অন্যটি ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাঙালি জাতির অর্থনৈতিক মুক্তি।’
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাকি কাজ বাস্তবায়ন করছেন তারই সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা। ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা যখন দেশে ফিরে আসেন, তখন আমরা দেখেছিলাম বঙ্গবন্ধুই যেন শেখ হাসিনার বেশে আমাদের মাঝে ফিরে এসেছেন।
‘বাংলাদেশ আজ সারাবিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। চমৎকার বাজেট হলে কিছু কিছু অসামাঞ্জস্য রয়েছে, তা ঠিক করতে হবে।’
শেখ ফজলুল করিম সেলিম আওয়ামী লীগের জন্মদিনে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা- এক ও অভিন্ন। পাকিস্তানিরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলে আমাদের দুঃখ থাকতো না, তাকে হত্যা করলো এই দেশেরই কিছু কুলাঙ্গার বেঈমান মোশতাক- জেনারেল জিয়া গংরা।
‘প্রমাণ আছে, জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের এজেন্ট ছিল। জিয়ার বাবা-মা কোনোদিন বাংলাদেশে আসেননি, তাদের কবরও পাকিস্তানে।’
তিনি বলেন, বগুড়ায় তার পূর্বপুরুষরা কবে এসেছিল কেউ বলতে পারে না। আর খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকি জেনারেল জানজুয়ার আতিথ্য নিয়ে পাকিস্তানের ক্যান্টনমেন্টে আরাম-আয়েশে ছিলেন। সে কারণে জানজুয়া মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় খালেদা জিয়া শোক দিয়েছেন ও পাকিস্তানে গিয়ে তার মাজার পর্যন্ত জিয়ারত করেছে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু তার জীবন দিয়ে আওয়ামী লীগকে গড়ে তুলেছেন। তার আদর্শ মেনে তার স্বপ্ন আমাদের পূরণ করতেই হবে। স্বাধীনতাবিরোধীরা বিশ্বের কোথাও রাজনীতি করতে পারে না, পালিয়ে বেড়ায়। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের দেশে তারা রাজনীতি করে।
গনফোরামের সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ বলেন, গত ৭ মার্চ সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিয়েছিলাম। দেশে এবং বিদেশে এই সংসদ নিয়ে সন্দেহ আর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিলো, নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল। ওইদিন আমি যদি শপথ না নিতাম তাহলে আজ বিএনপির যে কয়জনই হোক না কেন তারা শপথ নিত বলে আমার মনে হয় না।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর অনুসারী হিসেবে আমি ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। ৫২ বছরের রাজনীতিতে যাকে দেখে রাজনীতি শিখেছিলাম, তার আদর্শে অনপ্রাণিত হয়ে জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে আমি এই সংসদে এমপি হিসেবে শপথ নিয়েছিলাম।
‘মাননীয় স্পিকার আপনি জানেন আজ আমার ওইদিকেই (সরকার দল) থাকার কথা ছিলো। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। আজকের সংসদ নেত্রী আমাকে ছাত্রলীগের সভাপতি বানিয়েছিলেন। ডাকসুর ভিপিও বানিয়েছিলেন।’
তিনি বলেন, আজকের সংসদ নেত্রীর নির্দেশে পাগলের বেশে বেশে টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া, রুপসা থেকে পাথুরিয়া, সুনামগঞ্জ থেকে সুন্দরবন পর্যন্ত এমন কোন জেলা নেই যে জেলায় বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির জন্য এক বা একাধিকবার যায়নি। এমনকি ৭০ এ বেশি উপজেলায় পাগলের বেশে বেশে বঙ্গবন্ধুর জন্য রাজনীতি করেছি।
সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ বলেন, রাজনীতিতে স্বাধীনতার পরে যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিলো আমি মনে করি ২০০৮ সালের পর থেকে সেই প্রক্রিয়ায় আমিও শিকার হয়েছিলাম। এতদিন রাজনীতির কারাগারে ছিলাম। আমি আমার অনুভূতি থেকে মনে করেছিলাম যে এমন এক ব্যক্তির সঙ্গে একত্রে রাজনীতি করি, যার মধ্য দিয়ে আগামী দিনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে হেল্প করা যায়।
‘সেই লক্ষ্যেই জাতীয় নেতা বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহকর্মী ড. কামাল হোসেনকে সামনে নিয়ে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সাধারণ কর্মী হিসেবে সেদিন রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়েছিলাম। আমি কিন্তু আওয়ামী লীগ ছাড়ি নাই, আওয়ামী লীগও কিন্তু আমাকে বহিষ্কার করে নাই।’
বাজেট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই বাজেটের মধ্য দিয়ে অবশ্যই উন্নয়ন হবে। সংসদ নেত্রী বারবার বলেছেন, যে ঘুষ খাবে আর যে ঘুষ নেবে, আমি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো। আমি সব মন্ত্রণালয় নিয়ে বলবো না। সংসদ নেত্রীকে সামনে নিয়ে আসুন আজ আমরা শপথ করি প্রধানমন্ত্রীর নীতিকে বাস্তবায়ন করি।
তিনি বলেন, আমার বিবেচনায় একটি কুচক্রী মহল প্রধানমন্ত্রীকে এমন দিকে ঠেলে দিয়েছে, তা দুঃখজনক। যারা প্রধানমন্ত্রীকে পয়েন্ট অব নো রিটার্নের দিকে ঠেলে দিয়েছেন, তাদের হাত থেকে রক্ষার জন্য, জাতিকে রক্ষার লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের আজকের প্রতিষ্ঠার দিনে দলকে আরও সুসংগঠিত করতে হবে। এটা না হলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণ করা যাবে না।
সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, বিএনপি এখনও স্বাধীন বাংলাদেশে বিশ্বাস করে না। এরা ক্ষমতায় থাকতে দেশের উন্নয়নে কিছুই করেনি। একাত্তরের পরাজিত শত্রুরা এখনও দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। যারা বাজেট নিয়ে নিন্দা করেন, তারা একটু গ্রামে গিয়ে দেখুন প্রতিটি ঘরে কীভাবে বিদ্যুতের আলো জ্বলছে, রাস্তা-ঘাট পাকা হয়ে গেছে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, জাতি হিসেবে যদি আমরা উচ্চাভিলাষী না হতাম, তবে স্বাধীন একটি রাষ্ট্র আমরা পেতাম না। তাই উচ্চাভিলাষী হতেই হবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত তিন দশকে সারাবিশ্বে উন্নয়ন-অগ্রগতির ক্ষেত্রে রোলমডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত তার রিপোর্টে তারেক রহমানকে দুর্ধর্ষ একজন লোক ছাড়াও বড় দুর্নীতিবাজ হিসেবে উল্লেখ করে গেছেন।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ৫ বছর ক্ষমতায় থেকে বিএনপি-জামায়াত জোট এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারেনি। ১৬/১৭ ঘণ্টা জাতিকে অন্ধকারে রেখেছে। ছায়া সরকার হাওয়া ভবন এবং খালেদা জিয়া-তারেক-মামুনরা বল্গাহীনভাবে দুর্নীতি করেছে। ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে ৬০ মন্ত্রিসভার এক তৃতীয়াংশ বিপুল অর্থের মাধ্যমে বিক্রি করেছেন তারেক রহমান।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক তদন্তে এসব বেরিয়ে এসেছে। এ বছরের মধ্যে দেশের শতভাগ গ্রামে বিদ্যুৎ সুবিধা যাবে, প্রতিটি ঘরে আলো জ্বলবে।
‘বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি সালাম মোর্শেদী বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটটি শুধু ব্যবসাবান্ধব নয়, জনকল্যাণমূলক, বৈষম্যমূলক উন্নয়নমূলক বাজেট। বিএনপির কয়েকজন সংসদ সদস্য শেষ পর্যন্ত সংসদে যোগ দিয়ে মিথ্যাচারের মাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।’
জাতীয় পার্টির রওশন আরা মান্নান বলেন, ঋণ খেলাপিরা ঋণ নিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা সরকারকেই নিতে হবে। চীনের মতো ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আর বাস্তবায়ন করা না গেলে বড় বাজেট দিয়ে কোন লাভ হয় না।
আওয়ামী লীগের একেএম রহমতুল্লাহ বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট ১৯৯১ সালে এবং ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে রাজধানীর লেক ও খালগুলো গণহারে ভরাট করে গণহারে বিএনপির লোকদের প্লট দিয়েছে। বিএনপি পল্লী বানিয়েছে। অথচ সংসদে এসে তারা মিথ্যাচার করে। আওয়ামী লীগ রাজউকের মাধ্যমে প্লট বিক্রির ক্ষেত্রে ন্যূনতম রাজনীতিকরণ করেনি।
Leave a Reply