বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৬ পূর্বাহ্ন
জগন্নাথপুর নিউজ ডেস্ক :: দিরাইয়ে সাড়ে পাঁচ বছরের এক শিশু বর্বর হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। তাকে জবাই করে লাশ একটি গাছের ডালে রশি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। পেটে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের কেজাউরা গ্রামে রোববার রাতে এ ঘটনা ঘটেছে। সোমবার সকালে পুলিশ গিয়ে ওই শিশুটির লাশ উদ্ধার করে। ওই শিশুর কান ও লিঙ্গ কেটে নেওয়া হয়েছে। পুলিশ শিশুর বাবা-চাচা সহ ৭ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। হতভাগ্য শিশুটির নাম তুহিন মিয়া। তার বাবা আবুদল বাছির। পেশায় কৃষক।
আবদুল বাছির’এর আত্মীয় ইমরান আহমেদ জানান, আবদুল বাছিরের তিন ছেলে ও এক মেয়ে। এর মধ্যে তুহিন দ্বিতীয়। রোববার রাতে খেয়েদেয়ে সন্তানদের নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন তারা। রাত আড়াইটার দিকে পাশের কক্ষে থাকা বাছিরের এক ভাতিজি তাদের ঘুম থেকে ডেকে তুলে বলে তাদের ঘরের দরজা খোলা। এরপর সবাই জেগে ওঠে দেখেন তুহিন নেই। তখন প্রতিবেশীদেরও ডেকে তোলা হয়। শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। এক পর্যায়ে বাড়ির পাশের সড়কে রক্ত দেখতে পান তারা। এরপর কিছুটা সামনে গিয়ে সড়কের পাশেই একটি কদম গাছের ডালে তুহিনের ঝুলন্ত লাশ দেখতে পান তারা।
লাশের বিভৎসতা দেখে ভয়ে আঁতকে ওঠেন গ্রামবাসী। ৫ বছরের এই শিশু’র লিঙ্গ ও একটি কান কেটে সড়কে ফেলে রাখা হয়েছে। গলা কেটে হত্যাকা-ে ব্যবহৃত দুটি ছুরা শিশুর পেটে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাড়ির পাশের গাছের ডালে রশি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে শিশুটির লাশ। এমন নৃশংশ হত্যাকা- আগে কখনো দেখে নি এলাকাবাসী। হত্যাকা-ে ব্যবহৃত ছুরা দুটিতে কলম দিয়ে দুই জনের নাম লেখা হয়েছে। নাম দুটি হচ্ছে সুলেমান ও সালাতুল। এই দুই ব্যক্তি একই
গ্রামের বাসিন্দা।
রাজাননগর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শাহজাহান মিয়া বলেন, এরকম ঘটনা আমাদের এলাকায় আগে কখনো ঘটে নি। মানুষে মানুষে বিরোধ-শত্রুতা থাকতে পারে। এখানে শিশুর কি অপরাধ।
আবদুল বাছিরের ভাই আবদুল মছব্বির বলেন, জমিজমা নিয়ে গ্রামের কিছু মানুষের সঙ্গে আমাদের বিরোধ আছে। কিন্তু কে বা কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, আমরা বুঝতে পারছি না। যেই করে থাকুক আমরা তাদের শাস্তি চাই।
নিহত শিশু তুহিনের বাবা আব্দুল বাছির বলেন, বেশ কিছু দিন থেকে গ্রামের একটি পক্ষের সাথে আমাদের বিরোধ আছে, তাই বলে আমার ছেলেকে এমন নৃশংসভাবে হত্যা করবে কেউ, তা আমার বিশ^াস হয় না। তিনি বলেন আমার বড় ছেলে জকিনগর, তার নানা বাড়িতে বেড়াতে গেছে। আমি তুহিনসহ আমার অপর ছেলেকে নিয়ে রাতে এক বিছানায় ঘুমাতে যাই। রাত সাড়ে তিন টার দিকে আমার ভাতিজি সাবিনা মূল ঘরের দরজা খোলা দেখে ডাকাডাকি করলে, আমি জেগে দেখি আমার তুহিন নাই। পরে আমরা সবাইকে নিয়ে তার খোঁজ করতে থাকি। এরমধ্যে বাড়ির সামনের মসজিদের পাশের সড়কে রক্ত দেখতে পাই। পরে পাশের কদম গাছের সাথে দেখি ঝুলানো তুহিনের লাশ ।
আব্দুল বাছির জানান, পনের দিন পূর্বে তার এক কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করেছে। রোববার রাতের খাবার খেয়ে নিহত তুহিন ও তার ছোট ভাইকে নিয়ে সামনের কক্ষে তিনি ও নবজাতককে নিয়ে তার মা পেছনের কক্ষে ঘুমিয়ে পড়েন। রাত দেড়টার দিকে ঘুম ভাঙলে ঘরের বাইরে পশ্রাব করে এসে তুহিনের উপর কাঁথা দিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়েন তিনি।
কাউকে সন্দেহ করেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি যা দেখি নি, তা কিভাবে বলবো’।
এলাকাবাসী জানান, গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে একই গ্রামে সাবেক ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন’এর সঙ্গে নিহত তুহিনের পরিবারের বিরোধ চলে আসছে। এর আগেও এই গ্রামে খুনের ঘটনা ঘটেছে। তবে এমন নৃশংস হত্যকা- ঘটে নি।
স্থানীয় রাজানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সৌম্য চৌধুরী বলেন, কোনো মানুষ এমন কাজ করতে পারে তা বিশ^াস করতে কষ্ট হচ্ছে। দোষীদের গ্রেফতার করে সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে।
পলিশ সুপার মিজানুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানান, অপরাধী যেই হোক আমরা তাকে গ্রেফতার করব। এরমধ্যে কিছু আলামত পাওয়া গেছে। তদন্তের স্বার্থে প্রকাশ করা হবে না। খুব দ্রুতই অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে। তিনি জানান, এখনো পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয় নি। তবে এই ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শিশুর বাবাসহ ৭ জনকে থানায় আনা হয়েছে। এরা হলেন তুহিনের বাবা আব্দুল বাছির, চাচা আব্দুল মছব্বির, জমশেদ মিয়া, নাছির, জাকিরুল ও তুহিনের চাচী ও চাচাতো বোন।
ময়নাতদন্তের জন্য লাশ সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
Leave a Reply