শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৭:০৪ পূর্বাহ্ন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :: ভারতে নীচু জাত বা ছোট জাত হিসেবে অবহেলিত দলিত, তফসিলদের ডাকা বন্ধে পুরো দেশে তুলকালাম কাণ্ড। রাজ্যে রাজ্যে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন তফসিলি জাতি ও উপজাতির লোকেরা। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নৃশংসতা প্রতিরোধ (এসসি/এসটি) আইন, ১৯৮৯ সংশোধন করে ‘একচোখ’ আইনে পরিণত করার প্রতিবাদে সোমবার ভারতজুড়ে বন্ধের ডাক দেয় কয়েকটি দলিত সংগঠন।
সোমবার সুপ্রিমকোর্ট জানান, তফসিলি জাতি ও ?উপজাতিদের সুরক্ষা আইন নিয়ে জরুরিভিত্তিতে শুনানির প্রয়োজন নেই। এতে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে সারা দেশ।
বিহার, ঝাড়খন্ড, উড়িষ্যা, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট, পাঞ্জাব, দিল্লিসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে লাঠি, রড, তলোয়ার, ব্যাট হাতে চলে বিক্ষোভ। এ প্রতিবাদ-বিক্ষোভে নিহত হয়েছেন ৭ জন। এর মধ্যে বিক্ষোভকারীদের হঠাতে পুলিশ গুলি চালালে মধ্যপ্রদেশের মোরেনা ও গোয়ালিয়রে চারজন নিহত হয়েছেন বলে জানান মধ্যপ্রদেশের আইজি আইনশৃঙ্খলা মকরন্দ ডেউস্কর। ভারতজুড়ে এ বন্ধে প্রায় ২ শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। আটক হয়েছেন প্রায় ৩ শতাধিক বিক্ষোভকারী।
ট্রেন এবং সড়ক অবরোধে স্তব্ধ হয়ে পড়ে পরিবহন পরিসেবা। টায়ার জ্বালিয়ে, দোকানপাট ভাংচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। জ্বালিয়ে দেয়া হয় বহু গাড়িও। মারাঠে তিনটি বাসে আগুন লাগানো হয়। রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, পাঞ্জাবে ইন্টারনেট, মোবাইল পরিসেবা বন্ধ। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট, পাথর, বোতল ছুড়লে পাল্টা লাঠিচার্জ করে পুলিশ।
ধস্তাধস্তিতে আহত দু’পক্ষেরই অনেকে। সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে গণ্ডগোলের মাঝে পড়ে আহত হন সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা। পাঞ্জাবে সিবিএসই’র দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণীর সোমবারের পরীক্ষা পিছিয়ে দিয়েছে বোর্ড। রাজস্থানে আটক ৩০ জন।
গত ২০ মার্চ ভারতের সুপ্রিমকোর্ট দ্য শিডিউলড কাস্টস (এসসি) ও দ্য শিডিউলড ট্রাইবস (এসটি) নৃশংসতা প্রতিরোধ আইন, ১৯৮৯-এর অধীন স্বয়ংক্রিয় গ্রেফতার ও অপরাধমূলক কেস দায়ের নিষিদ্ধ করে রায় দেন। এর প্রতিবাদে এ বন্ধের ডাক দেয় দলিত সংগঠনগুলো।
এ আইন প্রান্তিক সম্প্রদায়গুলোর জন্য ছিল অপব্যবহার ও বৈষম্য থেকে রক্ষাকবচ। ওই রায়ে সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি একে গোয়েল ও ইউইউ ললিত আদেশ দেন যে, পূর্বানুমতি ছাড়া এসসি ও এসটি আইনের অধীন কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না। এছাড়া, আদালত যদি মনে করেন যে, আইনের অপব্যবহার হয়েছে, মিথ্যা, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কিংবা কাউকে ব্ল্যাকমেইল বা হয়রানি করার জন্য মামলা দায়ের করা হয়েছে তবে আসামিকে আগাম জামানত দিতে পারবেন আদালত।
সুপ্রিমকোর্ট জানান, কোনো সাধারণ নাগরিকের বিরুদ্ধেও যদি একই অভিযোগ ওঠে, তবে তাকে গ্রেফতারের আগে ডিএসপি পদমর্যাদার কোনো পুলিশ কর্মকর্তাকে দিয়ে তদন্ত করাতে হবে। এরই প্রতিবাদে এ দিন ভারত বন্ধের ডাক দিয়েছে রাষ্ট্রীয় সেবা দল, ন্যাশনাল দলিত মুভমেন্ট পর জাস্টিস, সিআইটিইউ, ভারিপ বহুজন মহাসঙ্ঘের মতো বেশ কয়েকটা সংগঠন।
তাদের দাবি, ‘সুপ্রিমকোর্টের এ নির্দেশ দলিতদের স্বার্থের পরিপন্থী।’ ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার সুপ্রিমকোর্টের এমন রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কেন্দ্র জানিয়েছে, এ রায়ের বিরোধিতা করে তারা নতুন করে আদালতে আবেদন জানিয়েছে। পঞ্জাবে তফশিলি জাতি ও উপজাতিভুক্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৩২ শতাংশ। সেখানকার কংগ্রেস সরকার জানিয়ে দিয়েছে, ‘দলিতদের দাবি ন্যায্য।’
Leave a Reply