শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:৪০ অপরাহ্ন
জগন্নাথপুর নিউজ ডেস্ক::
ভোটের মাঠে সেনাবাহিনী নামায় দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষনেতা ড. কামাল হোসেন। সারা দেশে নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির কঠিন দায়িত্ব তাদের ওপর ন্যস্ত।
তিনি বলেন, আমরা আশা করছি, এ মুহূর্তে জনগণের পাশে দাঁড়াবে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী। অতীতে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে তারা নিরপেক্ষ ও কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে। আশা করছি, এবারের নির্বাচনেও তারা আগের মতো জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণে ভূমিকা রাখবে। সেই ঐতিহ্য ধরে রাখবে, এ প্রত্যাশা সবার।
ড. কামাল হোসেন অভিযোগ করেন, পুলিশ তাদের জোটের প্রার্থীদের বাসায় হানা দিয়ে বাড়াবাড়ি করছে। অন্যদিকে বিজিবির সদস্যরাও নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি হানা দিচ্ছে, হয়রানি করছে। এ অবস্থায় দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনীই একমাত্র ভরসা। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের গণবিরোধী শক্তি সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ বন্ধ করার পাঁয়তারা করছে। আশা করছি, সেনাবাহিনী দলীয় প্রশাসন ও গণবিরোধী শক্তির পথ ধরবে না।’
সোমবার বিকালে পুরানা পল্টনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বক্তব্যটি পাঠ করেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।
এর আগে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ পেশাজীবী পরিষদের আয়োজনে ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও পেশাজীবীদের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন ড. কামাল হোসেন।
সেখানে তিনি সরকারি দলের উদ্দেশে বলেন, যারা এভাবে ধানের শীষের প্রার্থীদের ওপর হামলা চালায়, তাদের গ্রেফতার করে, তারা কাপুরুষ। সাহস থাকে তো সামনে আসেন। আমাদের বন্দুকের ভয় দেখাও? চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি- আস সামনা-সামনি। কয় লাখ লোক মারবে? সব মানুষ মারতে পারবা না।’
তিনি আরও বলেন, যারা আমাদের ভয়-ভীতি দেখাতে চায়, তারা আহাম্মক। তারা শহীদদের অপমান করছে। তারা ইয়াহিয়ার উত্তরসূরি।
বিকালের সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘জনমত যাচাই করলে দেখবেন সবাই পরিবর্তন চায়। একটা রায় হয়ে আছে। পূর্ণাঙ্গ রায় পাব ৩০ ডিসেম্বর।’ তিনি বলেন, আর মাত্র ২-৩ বছর পর আমরা ২০২১ সালে দেশের স্বাধীনতা ৫০ বছর পূর্তি পালন করতে যাচ্ছি। সেদিন আমরা যাতে বলতে পারি এমন একটি সরকার পেয়েছি, যারা সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে। অর্থবহ পরিবর্তন নিশ্চিত করতে সবাইকে ভোট দিতে যাওয়া উচিত।
ড. কামাল হোসেন বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের মাঠে দাঁড়াতেই দেয়া হচ্ছে না। ভোট দেয়া তো দূরের কথা কেউ নিজের ঘরে ঘুমাতে পারছে না। একদিকে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত হচ্ছে না অন্যদিকে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ভিসাও দেয়া হচ্ছে না। উপজেলা চেয়ারম্যানদের পদত্যাগপত্র গ্রহণের আইন থাকলেও হাইকোর্ট থেকে তাদের নির্বাচন করতে দেয়া হচ্ছে না। একমাত্র ভরসা যে স্বাধীনতার সময় অনন্য ভূমিকা পালনকারী বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মাঠে নেমেছে।
তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে অনন্য ভূমিকা পালনকারী আমাদের গর্ব সেনাবাহিনী বিশ্বব্যাপী শান্তি মিশনে কৃতিত্বের সঙ্গে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করে আসছে। দেশে নিরাপদ পরিবেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে জাতি তাদের কাছে সে ভূমিকাই প্রত্যাশা করে।
তিনি বলেন, দেশব্যাপী সে পরিবেশ সৃষ্টির কঠিন দায়িত্ব সেনাবাহিনীর ওপর ন্যস্ত। দেশে একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে নীলনকশা চলছে, সেটা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী ও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন কারো কাছেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আর এটা হবে আত্মঘাতী। এমনটা হলে দেশ ও জাতি চরম ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এ মুহূর্তে দেশবাসীর পাশে দাঁড়াবে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী।
তিনি বলেন, বিভিন্ন স্থানে বিজিবি মোতায়েন হলেও এখন পর্যন্ত পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নত হয়নি বরং পুলিশের উপস্থিতি ও বাড়াবাড়িতে পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে। পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে বিজিবি ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি হানা দিচ্ছে। সারা দেশে ঐক্যফ্রন্টের ধানের শীষের প্রার্থী, নেতাকর্মী-সমর্থকদের মাঠে দাঁড়াতেই দেয়া হচ্ছে না।
ড. কামাল হোসেন বলেন,দিন যত যাচ্ছে পুলিশের মারমুখী আচরণ ততই বাড়ছে। পুলিশ অনেকটা প্রতিপক্ষের ভূমিকায় অবতীর্ণ। ঐক্যফ্রন্টের কাউকে কোথাও সহ্য করতে পারছে না তারা। ক্ষমতাসীন সরকার ও একশ্রেণীর পুলিশ কর্মকর্তার আগ্রাসী ভূমিকা এবং অব্যাহত হামলা-মামলা-নির্যাতনের মুখে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ও নেতাকর্মীরা দিশেহারা। এভাবে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হচ্ছে প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায়। নিরাপদে ভোট চাওয়ার সুযোগও দেয়া হচ্ছে না।
তিনি বলেন, বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ভিসা দেয়ার ক্ষেত্রে রহস্যজনক আচরণ করা হচ্ছে। ইউরোপ-আমেরিকার পক্ষে বিদেশি এক সংস্থার ৩২ জনের জন্য নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অনুমতি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু এই ৩২ জনকে বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য সময়মতো ভিসা দেয়া হচ্ছে না। এতে ওই সংস্থার সবাই সময়মতো ভোট পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশে আসতে পারবে কি-না, তা নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। এ কারণে পর্যবেক্ষক নিয়োগ ইস্যুতে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মার্ক ফিল্ড উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সরকার কর্তৃক সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা অনতিবিলম্বে দূর করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান ড. কামাল হোসেন।
তিনি আরও বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান ও মেয়রদের পদত্যাগ করে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে আইন করা হলেও তাদের পদত্যাগ গৃহীত হচ্ছে না। আদালতে তাদের মনোনয়ন বাতিল হচ্ছে।
ড. কামাল বলেন, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ‘মূর্র্তির মতো দাঁড়িয়ে’ ভোট কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করতে হবে, বুথ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা যাবে না, সাংবাদিকরা মোটরসাইকেল ব্যবহার করে সংবাদ সংগ্রহ করতে পারবেন না, মোটরসাইকেলের জন্য পাস বা স্টিকার ইস্যু করা যাবে না, এক সঙ্গে একাধিক মিডিয়ার সাংবাদিক একই ভোটকক্ষে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে শনিবার এক নীতিমালা জারি করে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন ঘিরে এমন বক্তব্যের পর জনমনে নানা ধরনের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়। সব মহল থেকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ এবং সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবি উচ্চারিত হলেও নির্বাচন কমিশন কাক্সিক্ষত পরিবেশ সৃষ্টিতে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। ফলে এ নিয়ে খোদ নির্বাচন কমিশনে মতদ্বৈধতা সৃষ্টি হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে সারা দেশে হামলা-মামলা-নির্যাতন-গ্রেফতার, গুলি ও অগ্নিসংযোগের খতিয়ান তুলে ধরেন ড. কামাল হোসেন। ঐক্যফ্রন্ট দাবি করে, গায়েবি মামলায় ২১ ডিসেম্বর সারা দেশে ৬৯ জন, এর মধ্যে বিএনপির চেয়ারপারসনের সিএসএফের দু’জন সদস্য রয়েছেন। তফসিল ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত ঐক্যফ্রন্টের প্রায় ৭ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়।
শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবেন কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে ড. কামাল হোসেন বলেন, ?‘থাকব, ইনশাআল্লাহ? থাকব।’ শূন্য আসন নিয়ে সর্বশেষ সিদ্ধান্ত কী? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা সেসব আসনে নতুন প্রার্থী দিতে নির্বাচন কমিশনে আবেদন জানাই।’
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচন কমিশন এবং সরকারের যৌথ প্রযোজনায় নির্বাচনকে প্রহসন ও তামাশায় পরিণত করা হয়েছে। এটাকে কোনো নির্বাচনই বলা যায় না।
স্বাধীন দেশের মানুষ কেউ প্রজা না : স্বাধীন দেশের মানুষ কেউ প্রজা না। আমাদের যেন আর কেউ প্রজা বলতে না পারে, ৩০ তারিখ ভোটের মাধ্যমে তা দেখিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষনেতা ড. কামাল হোসেন।
তিনি বলেন, ‘আর মাত্র পাঁচ দিন আছে। আপনারা ভোটের মাধ্যমে দেখিয়ে দিন। আমরা প্রজা না, নাগরিক। স্বাধীন দেশের নাগরিকের দায়িত্ব আছে, কর্তব্যও আছে। সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ পেশাজীবী পরিষদের আয়োজনে ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও পেশাজীবীদের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সেনাবাহিনী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তরসূরি উল্লেখ করে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘দেশের সংবিধান, সার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়িত্ব তাদের। কেউ যদি আমাদের ওপর হামলা করতে আসে তা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করতে হবে। যারা মনে করে আমরা ভয় পেয়েছি তারা বোকার স্বর্গে বাস করে।’
পুলিশের আইজির উদ্দেশে ড. কামাল বলেন, বেআইনি অর্ডার মেনে নেয়া অপরাধ। যারা বেআইনি অর্ডার দিয়েছে তারা অপরাধী। তারা দেশ ও স্বাধীনতার শত্র“, সংবিধানের শত্র“।
পুলিশ বাহিনীর উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা দুই নম্বরি কাজ করবেন না। কারও অবৈধ নির্দেশ মানা অন্যায়। সুষ্ঠুভাবে ভোটদানে আপনারা সহযোগিতা করুন। জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, ৩০ ডিসেম্বর ফজর নামাজ থেকে আপনারা প্রতিটি কেন্দ্রে আসবেন। নিজেরা ভোট দেয়ার পাশাপাশি ভোট কেন্দ্রগুলো পাহারা দেবেন। আমরা চাই কোনো অনির্বাচিত সরকার নয়, নির্বাচিত বৈধ সরকার দেশ শাসন করুক।
স্বাধীনতা, মৌলিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার রক্ষার আহ্বান জানিয়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, আগামী ৩০ তারিখ ভোট দিয়ে ভোট কেন্দ্র পাহারা দিতে হবে। ড. কামাল হোসেন বলেন, ভোট দেয়ার জন্য আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। ভোট দিতে জনগণকে যারা বাধা দেবে তারা স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি। ওরা বঙ্গবন্ধুসহ জাতীয় ৪ নেতার শত্র“। কারণ বঙ্গবন্ধু ও চার নেতা ভোট দেয়ার আমানত রেখে গেছেন। এই সরকার অনির্বাচিত সরকার। তারা ভোট দিতে বাধা দেবে, তা বিজয়ের মাসে মেনে নেয়া যায় না।
নির্বাচনের দিন ভোটারদের বাধা দেয়ার জন্য বাহিনীগুলোকে সরকার কোটি কোটি টাকা ঘুষ দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে সেনাবাহিনী নেমেছে। কিন্তু কেউ নিশ্চয়তা দিতে পারব না সেদিন কেউ ভোটারদের বাধা দেবে না। বরং ভোটে বাধা দেয়ার জন্য বাহিনীগুলোকে কোটি কোটি টাকা ঘুষ দিচ্ছে সরকার। তাদের কিনে নেয়ার চেষ্টা করছে।’
তিনি আরও বলেন, মানুষ একটি খড়কুটো ধরে বাঁচতে চায়। সরকারের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে কারও ওপর ভরসা করতে চায়। দেশ আজ এক ঘোর অমানিশার মধ্যে নিপতিত। জনগণ এই সরকারের পতন চায়।
সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য দেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমান, ঐক্যফ্রন্ট নেতা সুব্রত চৌধুরী, মোস্তফা মহসিন মন্টু প্রমুখ।
Leave a Reply