বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৫:০১ অপরাহ্ন
জগন্নাথপুর নিউজ ডেস্ক :: ফেসবুকে ধর্মীয় বিষয় নিয়ে আপত্তিকর পোস্ট দেয়ায় ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় সাধারণ তৌহিদি জনতার বিক্ষোভ সমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে মুসল্লিদের সংঘর্ষে চারজন নিহত হওয়ার ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠেছে হাটহাজারী এলাকা।
আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণের খবর পেয়ে হেফাজত দুর্গ বলে খ্যাত চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে বিক্ষোভ করেছে আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম প্রকাশ হাটহাজারী বড় মাদ্রাসার বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা।
রোববার (২১ অক্টোবর) আসরের নামাজের পর চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি মহাসড়কের হাটহাজারী পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা মডেল থানায় ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে ভাংচুর করেছে। তাছাড়া এ ঘটনায় ৩ জন মাদ্রাসার শিক্ষার্থী আহত হয়েছে বলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এ ছাড়া চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি মহাসড়কের বিভিন্ন স্পটে মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রায় ৩টি সড়ক অবরোধ করে রাখার ঘটনা ঘটে। তবে হাটহাজারীতে সংঘটিত ঘটনা তথা বিক্ষোভের সঙ্গে মাদ্রাসার কোনো ছাত্র-শিক্ষক এবং হেফাজতে ইসলামের কোনো নেতাকর্মী জড়িত নয় বলে দাবি করেছেন মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।
প্রত্যক্ষদর্শী, বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও থানা পুলিশ সূত্র জানায়, রোববার ভোলার বোরহানুদ্দিনে মহানবী (সা.) ও আল্লাহ তায়ালাকে নিয়ে কটূক্তিকারীর শাস্তি ফাঁসির দাবি ও আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণ ও নিহত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে হাটহাজারী বড় মাদ্রাসার সামনে মাদ্রাসার বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি মহাসড়কে অবস্থান নেয়।
শিক্ষার্থীরা মহাসড়কে হাটহাজারী মাদ্রাসার সম্মুখে, হাটহাজারী বাজার, মেডিকেল গেট, ভূমি অফিসের সামনে, কলেজ গেট ও বাসস্টেশন এলাকার মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখে।
এ সময় বাসস্টেশন চত্বরে বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা মাগরিবের নামাজ আদায় ও অগ্নিসংযোগ করতে দেখা গেছে। হঠাৎ ওই মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুই পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি জেলায় পৌঁছায় প্রায় ৩০টি রুটের হাজার হাজার যাত্রীসাধারণকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।
অবরোধের ফলে সাধারণ যাত্রীদের ভয়ে দিকবিদিক ছোটাছুটি করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া হাটহাজারী বাজারের শত শত দোকান-পাট বন্ধ করে দোকানিরা নিরাপদ স্থানে সরে যেতে দেখা গেছে।
বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা একপর্যায়ে হাটহাজারী মডেল থানায় ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে মূল ফটক ও কাচের দরজা এবং জানালার কাচ ভাংচুর করে। এ সময় তারা পার্শ্ববর্তী সীতাকালী মন্দিরে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করার চেষ্টা করলে মাদ্রাসার অন্য শিক্ষার্থীরা তাদের রুখে দেয় এবং মন্দিরে হামলা তথা যাতে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে না পারে এ জন্য তারা বেশ জোড়ালো ভূমিকা পালন করে।
শিক্ষার্থীরা দাবি করে, আন্দোলন চলাকালীন বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে ৩ রাউন্ড টিয়ার শেল ছুড়ে পুলিশ। এতে মাদ্রাসার ৩ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। আহতরা হল-মো. রায়হান (২২), মো. আলাউদ্দিন (২১) ও মো. জাহেদুল ইসলাম (২০)।
রক্তাক্ত অবস্থায় আহতদের সহপাঠীরা স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে বলে জানান মেডিকেল অফিসার ডাক্তার সুপ্রিয়া চৌধুরী।
তিনি জানান, আহতদের মধ্যে রায়হান নামে এক শিক্ষার্থীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। তার মাথার ডান পাশে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় বেশ রক্তক্ষরণ হয়েছে। আঘাত গুরুতর হওয়ায় তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে দ্রুত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। বর্তমানে ওই শিক্ষার্থী চমেক হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে সংঘটিত এ ঘটনায় মাদ্রাসার কোনো ছাত্র-শিক্ষক এবং হেফাজতে ইসলামের কোনো নেতাকর্মী জড়িত নয় বলে দাবি করেন হাটহাজারী মাদ্রাসার সহযোগী পরিচালক ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী।
তিনি মাইকে ঘোষণা করে বলেন, মাদ্রাসার পক্ষ থেকে কোনো বিক্ষোভের ব্যবস্থা করা হয়নি। হেফাজতের পক্ষ থেকে কোনো মিছিল বা বিক্ষোভের ব্যবস্থা করা হয়নি। কে বা করা করেছে তা আমাদের অজানা। এ সময় বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসার ভিতরে থাকা শিক্ষার্থীরা অন্য শিক্ষার্থীদের বেরিয়ে আসার আহ্বান জানাতে দেখা যায়।
পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো টিয়ার শেল ছুড়া হয়নি এমনটা দাবি করে হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মাসুম মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে জানান, বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে তাদের ইচ্ছা মতো থানার মূল ফটক ও কাচের দরজা এবং জানালার কাচ ভাংচুর করেছে। এ ক্ষেত্রে আমরা সর্বোচ্চ ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা পরিচয় দিয়েছি।
অন্যদিকে রাত পৌনে ৮টার দিকে হাটহাজারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যার এস এম রাশেদুল আলমের নেতৃত্বে থানা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তারা মাদ্রাসায় এ ঘটনার সুরাহাকল্পে মাদ্রাসার পরিচালক হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে মাদ্রাসায় প্রবেশ করে বলে জানা গেছে।
এ ছাড়া এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রাত সাড়ে ৮টায় এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করার পাশাপাশি পরিস্থিতি থমথমে ছিল। তবে মহাসড়কে যান চলা স্বাভাবিক হতে শুরু করে এবং দোকানপাঠ খোলতে দেখা গেছে। তাছাড়া ঘটনার খবর পেয়ে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপারসহ ঊর্ধ্বতন কর্তারা মডেল থানা পরিদর্শনে আসেন।
Leave a Reply