শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৫৮ অপরাহ্ন
স্পোর্টস ডেস্ক ::
প্রথম দু’ম্যাচ জিতে আগেই সিরিজ নিশ্চিত করে ফেলায় নিয়ম রক্ষার শেষ ওয়ানডেতে সাইড বেঞ্চের শক্তিমত্তা দেখে নিতে একাদশে তিনটি পরিবর্তন এনেছিল বাংলাদেশ। ম্যাচের প্রথমভাগ শেষে এমন সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন অনেকে।
চ্যালেঞ্জটা তখন বেশ কঠিনই মনে হচ্ছিল। শন উইলিয়ামসের সেঞ্চুরি ও ব্রেন্ডন টেলরের ফিফটিতে পাঁচ উইকেটে ২৮৬ রানের বড়সড় সংগ্রহ গড়েছিল জিম্বাবুয়ে। জবাবে ইনিংসের প্রথম বলেই আউট লিটন দাস। গল্পের পরের অংশটা নিদারুণ একপেশে।
শুরুর ধাক্কা সামলে ইমরুল কায়েস ও সৌম্য সরকারের দুরন্ত শতকে জিম্বাবুয়েকে খড়কুটোর মতোই উড়িয়ে দিল বাংলাদেশ। শুক্রবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সাত উইকেটের দাপুটে জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজ ৩-০তে জিতে জিম্বাবুয়েকে আরেকটি হোয়াইটওয়াশের গ্লানি উপহার দিল বাংলাদেশ।
ওয়ানডেতে এ নিয়ে টানা তৃতীয়বার ও সব মিলিয়ে চতুর্থবার জিম্বাবুয়েকে ধবলধোলাই করল বাংলাদেশ। শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের উড়ন্ত জয়ের যুগল নায়ক ইমরুল ও সৌম্য। সেঞ্চুরির পাশাপাশি রেকর্ডভাঙা জুটিতে তারা রাঙিয়েছেন ইতিহাসের পাতা।
দ্বিতীয় উইকেটে সৌম্য ও ইমরুলের ২২০ রানের জুটি বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জুটি। মাত্র পাঁচ রানের জন্য গত বছর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পঞ্চম উইকেটে সাকিব ও মাহমুদউল্লাহর গড়া ২২৪ রানের জুটির রেকর্ড ভাঙতে পারেননি তারা।
তবে দ্বিতীয় উইকেটে তামিম ও সাকিবের ২০৭ রানের জুটির রেকর্ড ঠিকই ভেঙে দিয়েছেন। এছাড়া জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে যেকোনো উইকেট মিলিয়েই এটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ জুটি। অনবদ্য এই যুগলবন্দির পথে দু’জনই খেলেছেন মুগ্ধতা ছড়ানো সব শট। প্রস্তুতি ম্যাচে সেঞ্চুরি করা সৌম্য দলে ফিরেই নিজেকে চেনালেন নতুন করে।
মাত্র ৮১ বলে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওয়ানডে শতক পূর্ণ করেন এই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান। শেষ পর্যন্ত ৯২ বলে নয় চার ও ছয় ছক্কায় ১১৭ রান করে আউট হন সৌম্য। সিরিজজুড়ে মুগ্ধতা ছড়ানো ইমরুলও অনায়াসে তুলে নেন তার চতুর্থ ওয়ানডে শতক।
তিনি আউট হন ১১২ বলে ১০ চার ও এক ছক্কায় ১১৫ রান করে। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটি ছিল তামিমের। ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে তামিম তিন ম্যাচে করেছিলেন ৩১২ রান।
এবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচে দুই সেঞ্চুরি ও এক ফিফটিতে ৩৪৯ রান করে সেই রেকর্ডটি নিজের করে নিলেন ইমরুল। দলীয় ২৭৪ রানে ইমরুলের বিদায়ের পর মোহাম্মদ মিঠুনকে (৭) নিয়ে বাকি পথটুকু অনায়াসেই পাড়ি দেন মুশফিকুর রহিম (২৮)। ৪৭ বল ও সাত উইকেট হাতে রেখেই জয়ের কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায় পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।
পরীক্ষা-নিরীক্ষার আভাস আগেই দিয়েছিলেন অধিনায়ক মাশরাফি মুর্তজা। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে সেভাবেই একাদশ সাজিয়ে মাঠে নামে বাংলাদেশ। দলে আসে তিন পরিবর্তন।
মোস্তাফিজুর রহমান ও মেহেদী হাসান মিরাজকে বিশ্রামে রাখার পাশাপাশি বাদ দেয়া হয় ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডেতে শূন্য করা ফজলে আহমেদ রাব্বিকে। তিন পরিবর্তনে সুযোগ পেয়ে যান প্রথম দুই ম্যাচে সাইড বেঞ্চে থাকা আবু হায়দার রনি ও আরিফুল হক।
সেই এশিয়া কাপ থেকে দলের সঙ্গে থাকতে থাকতে অবশেষে বাংলাদেশের ১৩০তম ক্রিকেটার হিসেবে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে কাল ওয়ানডে দিয়ে অভিষেক হল ২৫ বছর বয়সী আরিফুলের। আর শেষ ম্যাচে দলে ফেরা সৌম্য সরকারও পেয়ে যান সুযোগ। টানা তৃতীয় ম্যাচে টস জিতে শিশির ও ব্যাটিং সুবিধার কথা মাথায় রেখে ফিল্ডিং নেন অধিনায়ক।
আবু হায়দার ও সাইফউদ্দিন দারুণ শুরু এনে দেয় দলকে। নিজের প্রথম ওভারে সাইফউদ্দিন ফেরান ঝুওয়াওকে। নিজের দ্বিতীয় ওভারে আবু হায়দার তুলে নেন আরেক ওপেনার হ্যামিল্টন মাসাকাদজাকে। ছয় রানেই সফরকারীদের দুই ওপেনার সাজঘরে ফেরেন।
এরপরই শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে উঠে উল্টো বাংলাদেশকে চাপে ফেলে দেন ব্রেন্ডন টেলর ও শন উইলিয়ামস। বাংলাদেশ টানা পাঁচ পেসার দিয়ে প্রথম বোলিং করিয়ে যায়। কিন্তু তৃতীয় উইকেট এনে দিতে পারেননি তারা। অবশেষে তৃতীয় উইকেটে ১৩২ রানের জুটি ভাঙেন বাঁ-হাতি স্পিনার নাজমুল ইসলাম।
৭৫ রানে টেলরকে মুশফিকের ক্যাচ বানান এই বাঁ-হাতি স্পিনার। আগের ম্যাচেও ৭৫ করে আউট হয়েছিলেন জিম্বাবুয়ের সেরা ব্যাটসম্যান। তার বিদায়ের পর চতুর্থ উইকেটে সেকেন্দার রাজাকে নিয়ে ৮৪ রানের আরেকটি বড় জুটি গড়েন উইলিয়ামস। সেকেন্দারকে সৌম্যর ক্যাচ বানিয়ে আবারও এই জুটি ভাঙেন নাজমুল।
একপ্রান্ত আগলে রাখার সঙ্গে রানের গতিও বাড়িয়ে নিয়ে যান উইলিয়ামস। শেষপর্যন্ত ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন তিনি। পেয়ে যান দ্বিতীয় ওয়ানডে সেঞ্চুরি। তার আগের সর্বোচ্চ ইনিংস ছিল ১০২।
কাল ১৪৩ বলে ১০ চার ও এক ছক্কায় ১২৯* রান করেন। শেষদিকে ২১ বলে দুই ছক্কায় ২৮ করে দলকে তিনশ’ ছুঁই ছুঁই রানে নিয়ে যান পিটার মুর। অবশ্য শেষ তিন ওভারে নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে জিম্বাবুয়েকে তিনশ’ ছুতে দেননি সাইফউদ্দিন ও আবু হায়দার। জিম্বাবুয়ে থামে পাঁচ উইকেটে ২৮৬ রানে।
এদিনও বোলিং ভালো করতে পারেননি মাশরাফি। খরুচে বোলিংয়ে আট ওভারে কোনো উইকেট না নিয়ে দেন ৫৬ রান। ৫৮ রানে দুই উইকেট নিয়ে সেরা বোলার নাজমুল।
Leave a Reply