শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩৬ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার :: সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে কষ্টার্জিত ফসল নিয়ে দুশ্চিন্তায় যখন কৃষক দিশেহারা, তখন কৃষকের পাশে কাস্তে নিয়ে মাঠে নেমেছেন এলাকার ছাত্র-শিক্ষক, যুবক ও স্থানীয় এলাকাবাসী।
মঙ্গলবার থেকে জগন্নাথপুর উপজেলার নলুয়া, মই ও পিংলার হাওরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
জানা যায়, শ্রমিক সংকটের কারণে উপজেলার কেশবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে ছাত্র-শিক্ষক ও এলাকার যুবক মিলে ৭২জনের একটি দল পিংলার হাওরে সমুজ মিয়ার ৮ কেদার (৩০ শতকে ১ কেদার) ও আব্বাস মিয়ার ৪ কেদার জমি স্বেচ্ছাশ্রমে কেটে দেন।
অন্যদিকে উপজেলার রতিয়ারপাড়া বাদশাহ মিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গনেশ চক্রবর্তীর নেতৃত্বে স্থানীয় শ্রমিক, কর্মহীন যুবক, স্বেচ্ছাশ্রমী স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ ৩৫ জন ধান কাটার শ্রমিক হিসেবে হাওরে কৃষকের পাকা ধান কাটছেন। ওই ৩৫ জনের মধ্যে ২৩ জন আব্দুল বারিক নামের এক দরিদ্র কৃষকের ক্ষেতের ধান কাটেন। অপর ১২ জন কৃষক সৈয়দ মিয়ার জমির ধান কেটেছেন।
কলেজ পড়–য়া ছাত্র মামুন আহমদ জানান, শ্রমিক সংকটের কারণে পাকা ধান নিয়ে দুশ্চিন্তা গ্রস্থ হয়ে পড়েছেন কৃষক। তাই আমরা ১২ জন শিক্ষার্থী আমাদের স্যারের সহযোগিতায় কৃষক আব্দুল বারিকের ধান স্বেচ্ছাশ্রমে কেটেছি। হাওরে ফসল ওঠার আগ পর্যন্ত অসহায় কৃষকদের ধান কাটবো আমরা।
কৃষক আব্দুল বারিক জানান, শ্রমিকের অভাবে জমির পাকা ধান নিয়ে হতাশায় ভুগছিলাম। হঠাৎ করে সকালে হাওরে শিক্ষক, ছাত্রসহ ৩৫ জনের দল এসে জানালেন তাঁরা ক্ষেতের পাকা ধান কাটবেন। পরে ৩৫ জনের মধ্যে শিক্ষক ও ছাত্র মিলে ২৫ জন আমার তিন কেদার জমির ধান কেটে দিয়েছেন। তাদের সহায়তায় ধান কাটতে পেরে আমি আনন্দিত। আর এ জন্য তারা কোনো পারিশ্রমিক নেননি।
আরেক কৃষক সৈয়দ মিয়া নিজের জমির পাকা ধান কাটতে পেরে খুশি বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এবার ২৪ কেদার জমিতে বোরো আবাদ করেছি। জমির ধান পেকে গেছে। কিন্তু শ্রমিক সংকটের কারণে ধান নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিলাম। এখন ধান কাটার লোকজন পেয়ে যাওয়ায় সংকট দূর হয়ে গেছে।
তিনি জানান, তার তিন কেদার জমির ধান দুপুর পর্যন্ত কাটা শেষ হয়েছে। তিনি আশা করছেন, আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে দুই/তিনদিনের মধ্যে তার জমির সব ফসল কাটা শেষ হয়ে যাবে।
শিক্ষক গনেশ চক্রবর্তী বলেন, একদিকে করোনার আতংক, অন্যদিকে আগাম বন্যার শঙ্কায় শঙ্কিত কৃষকরা। এ অবস্থায় হাওরে পাকা ধান নিয়ে চিন্তিত তারা। ইউএনও মাহফুজুল আলম মাসুম ও কৃষি কর্মকর্তা শওকত ওসমান মজুমদারের অনুরোধে জগন্নাথপুর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের জগন্নাথপুর এলাকার স্কুল-কলেজের ছাত্রসহ স্থানীয় শ্রমিক ও কর্মহীন ৩৫ জন লোক সংগ্রহ করে মাঠে গিয়ে আমরা কৃষকের ধান কাটতে পেরে খুবই ভালো লাগছে।
মঙ্গলবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহফুজুল আলম মাসুম জানান- উপজেলার ছাত্র-শিক্ষক, রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন পেশার প্রায় তিন হাজার মানুষ উপজেলার হাওর গুলোতে স্বেচ্ছাশ্রমে ধান কাটছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শওকত ওসমান মজুমদার শ্রমিক সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, জগন্নাথপুরের প্রতিটি হাওরে স্থানীয় প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের প্রচেষ্টায় শিক্ষক, ছাত্র, ব্যবসায়ী, স্বেচ্ছাসেবকসহ বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ ধান কাটছেন। আশা করছি এক সপ্তাহের মধ্যে ফসল তোলা সম্ভব হবে। এবার এ উপজেলায় প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ফসল আবাদ করা হয়েছে।
Leave a Reply