শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:০১ অপরাহ্ন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক::
ভূমি দখল করে সেখানে কট্টর হিন্দুত্ববাদী বসতি স্থাপনের পাঁয়তারা ন
ভূস্বর্গ কাশ্মীর আজ রক্তাক্ত। মধ্যপ্রাচ্যের ফিলিস্তিন আর এশিয়ার কাশ্মীরের মধ্যে এখন আর কোনো পার্থক্য নেই। মুসলিম অধ্যুষিত এই উপত্যকায় ইসরাইলের ফিলিস্তিন দখলের মতোই আগ্রাসন চালাচ্ছে ভারত। সেনাবাহিনী দিয়ে ভারতের দখলদারি আর আগ্রাসন।
স্বাধীনতাকামীদের ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে হত্যা, জেল-জরিমানা; ঘরে ঘরে তল্লাশি, সাধারণ নাগরিকদের খুন-গুম; বালিকা-কিশোরী-নারীদের ধর্ষণ-হত্যা; সাংবাদিকদের হয়রানি-হত্যা-অপহরণ চলছে সমানে।
গত মাসেই আটক করা হয় কাশ্মীরি সাংবাদিক আসিফ সুলতানকে। পত্রিকায় সশস্ত্র এক বিদ্রোহী নেতার সংক্ষিপ্ত পরিচয় লেখার কারণে গত দুই সপ্তাহ ধরে জেল খাটছেন তিনি। ‘সন্ত্রাসবাদ প্রশ্রয়’ দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে।
গত ৭০ বছর ধরে চলছে এ অবস্থা। এত অত্যাচার-নিপীড়নেও কাশ্মীরিদের দমাতে না পেরে এবার ভিন্ন ফর্মুলা (কৌশল) আঁটছে ভারত। কাশ্মীরে ইসরাইলি স্টাইলে ভূমি দখল করে সেখানে কট্টর হিন্দুত্ববাদী বসতি স্থাপনের পাঁয়তারা করছে নয়াদিল্লি। সম্প্রতি দ্য নিউ আরবের এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।
১৯৪৭ সালের ২৫ অক্টোবর ভারতের সঙ্গে কাশ্মীরের একীভূত হওয়ার ব্যাপারে নয়াদিল্লির সঙ্গে এক চুক্তি স্বাক্ষর করেন মহারাজা হরি সিং। এর কয়েক বছর পর ভারতীয় সংবিধানে জম্মু-কাশ্মীরকে ‘সীমিত সার্বভৌমত্ব’ ও ‘বিশেষ মর্যাদা’ দেয়া হয়।
১৯৫৪ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্র প্রসাদের নির্দেশে কাশ্মীরকে ‘বিশেষ নাগরিক’ অধিকার দিয়ে ভারতীয় সংবিধানে আলাদা দুটি ধারা আর্টিকেল ৩৫(এ) ও আর্টিকেল ৩৭০ যুক্ত করা হয়। ধারা দুটি অনুযায়ী, কাশ্মীরে অন্য রাজ্যের বাসিন্দাদের স্থায়ীভাবে বসবাস, সম্পত্তি কেনা এবং সরকারি চাকরির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
শুধু কাশ্মীরিরাই ভূ-সম্পত্তির মালিক হওয়ার অধিকারী। সংবিধান থেকে এ ধারা দুটি বাতিলের চেষ্টা করা হচ্ছে। এর পেছনে রয়েছে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার ও হিন্দু মৌলবাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ (আরএসএস)। মূলত তাদের মদদেই ২০১৪ সালে কাশ্মীরের ‘বিশেষ মর্যাদা’ বাতিলে সুপ্রিমকোর্টে একটি রিট করেছে ‘উই আর সিটিজেনস’ নামের একটি এনজিও।
চলতি বছরের ৬ আগস্ট এ ব্যাপারে এক শুনানি হওয়ার কথা ছিল। শেষ পর্যন্ত ওই দিনের শুনানি স্থগিত করে সুপ্রিমকোর্ট অনির্দিষ্টকালের জন্য শুনানি পিছিয়ে দিয়েছে। তবে এই রিটে ভয় ঢুকে গেছে কাশ্মীরিদের। ভয় বাপ-দাদার ভিটে-মাটি-জমি হারানোর।
এই আতঙ্ক থেকেই ফুঁসে উঠেছে মূলধারা ও স্বাধীনতাকামী রাজনৈতিক দলগুলোসহ এ অঞ্চলের সর্বস্তরের জনগণ। সরকার ও সুপ্রিমকোর্টের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ-প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছে তারা।
সেই সঙ্গে শহর থেকে গ্রাম, চায়ের আড্ডা থেকে সরকারি-বেসরকারি অফিস, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাজার-শপিং মল সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে ৩৫(এ) ধারাবিরোধী হুশিয়ারি। আশঙ্কা, ধারা দুটি বাতিল করে কাশ্মীরে ইসরাইলি স্টাইলে ভূমি দখল করতে চায়।
কাশ্মীর ট্রেডার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট বশির আহমেদের কণ্ঠেও সেই আশঙ্কা। বশির বলছেন, ‘আজ ধারা দুটি বাতিল করা হলে ভারত থেকে আগামীকালই কোনো এলিট ব্যবসায়ী এখানে চলে আসবেন ব্যবসা করতে।
কাশ্মীরে জমি কিনবেন, বসতি গড়বেন। কবর বা শ্মশান বানাতেও এক চিলতে জমি আমাদের থাকবে না। ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন আমরা। জীবন থাকতে হতে দেব না।’
আর্টিকেল ৩৫(এ) রক্ষায় মামলা প্রক্রিয়া বাতিলের জন্য ভারতের সুপ্রিমকোর্টের কাছে একটি পিটিশন রুজু করেছে কাশ্মীরি হাইকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন। বার অ্যাসোসিয়েশন অব দ্য ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের সেক্রেটারি ইরফান গুলজার শেখ বলেছেন, ‘আর্টিকেলটি সুরক্ষা খুবই জরুরি। আমাদের জনসংখ্যা, পরিচয়, বিশেষ মর্যাদা ও পরিবেশ আজ হুমকি মুখে।’
ধারাটির রক্ষায় ভারত সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে কাশ্মীরের বাণিজ্য ও শিল্প বিষয়ক অন্তত ২৭ সংগঠন এক যোগে লড়াই চালাতে এক প্লাটফর্মে হাজির হয়েছে। তাদের আশঙ্কা, এর মধ্য দিয়ে পরিচয় সংকটে পড়বে কাশ্মীরিরা।
কাশ্মীরের ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিস সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগের প্রধান ড. রুহিলা হাসান বলেন, এ রাজ্যের মানুষ এমনিতেই সুবিধাবঞ্চিত। বলতে গেলে কোনো অধিকারই ভোগ করে না তারা।
৩৫(এ) ধারা বাতিল পরিচয়ের অধিকারটুকুও কেড়ে নেবে। কাশ্মীর সংকট জিইয়ে রেখে সেখানে ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ নীতিতে শাসন করছে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার। এবার সেই নীতিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
Leave a Reply