সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ০৫:২৭ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
জগন্নাথপুরে জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহের উদ্বোধন রানীগঞ্জ সেতুর পাশ থেকে বালু উত্তোলন- ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে প্রতিবেদন দিতে আদালতের নির্দেশ জগন্নাথপুরে ধান চাল ক্রয় কার্যক্রমের উদ্বোধন: লটারির মাধ্যমে মনোনীত ৮১০ ভাগ্যবান কৃষক জগন্নাথপুর পৌরশহরে ৩৫ দোকানঘর  ভাড়া থানায় দিলেন ব্যবসায়ী গন জগন্নাথপুরে চুরি যাওয়া ৩টি টমটম উদ্ধার : গ্রেপ্তার ৪  জগন্নাথপুর পৌরশহরে ৫৫ দোকানঘর  ভাড়া থানায় দেওয়ার নির্দেশ পুলিশের জগন্নাথপুরে আদালতের নির্দেশ মোতাবেক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ও নির্ধারিত তারিখে দোকানঘর  নিলাম হয়নি!   সাংবাদিক শংকর রায়ের মৃত্যু তে প্রবাসী  সাংবাদিক তৌফিক আলী মিনার এর শোক জগন্নাথপুর প্রেসক্লাব সভাপতি শংকর রায় আর নেই: প্রেসক্লাবের শোক এবার ৩২ টাকা কেজিতে ৫ লাখ টন ধান,   ১২ লাখ টন চাউল কিনবে সরকার 

প্রদীপে চাপা পড়ছে লিয়াকতের অপকর্ম

প্রদীপে চাপা পড়ছে লিয়াকতের অপকর্ম

জগন্নাথপুর নিউজ ডেস্কঃ  পুলিশের গুলিতে মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যার ঘটনায় টেকনাফের সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ এখন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’। সারা দেশে ওসি প্রদীপকে নিয়ে ব্যাপক আলোচনা থাকলেও সিনহাকে গুলিবর্ষণকারী বাহারছাড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ লিয়াকত হোসেনকে নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা নেই।

প্রদীপে চাপা পড়ছে লিয়াকতের অপকর্ম। কিন্তু যুগান্তরের অনুসন্ধানে লিয়াকতের বিষয়ে বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য। ওই তদন্ত কেন্দ্রে যোগদানের সাত মাসের মধ্যেই তিনি এলাকায় মূর্তমান আতঙ্ক হয়ে ওঠেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ- মাদক ব্যবসায়ী ও মানবপাচারের অভিযোগ তুলে অনেকের কাছ থেকেই চাঁদা আদায় করতেন তিনি।

এছাড়া এলাকার বেশ কয়েকটি ফিশারিজ ঘাট থেকেও নিয়মিত মাসোহারা আদায় করতেন। পাশাপাশি প্রদীপের মতো টাকা নেয়ার পরও ক্রসফায়ারে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে লিয়াকতের বিরুদ্ধেও।

এদিকে সোমবার সন্ধ্যায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, হত্যাকাণ্ডের পর আইনজীবী এবং স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তাদের ফোনালাপের যেসব তথ্য ফাঁস হয়েছে প্রাথমিক তদন্তে সেসবের সত্যতা পাওয়া গেছে।

তদন্ত কর্মকর্তা বিষয়টি নিয়ে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছেন। এছাড়া দুই দফা জেলগেটের জিজ্ঞাসাবাদে কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন ও আবদুল্লাহ আল মামুন এবং এএসআই লিটন মিয়ার কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে।

সেসব তথ্য যাচাই করে দেখা হচ্ছে। রিমান্ডে এনে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে আরও তথ্য বেরিয়ে আসবে। তিনি বলেন, রোববার জামিন পাওয়ার পর সিনহার সহকর্মী শিপ্রা এখনও আপসেট অবস্থায় আছেন। এরই মধ্যে আমরা তাকে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অত্যন্ত স্পর্শকাতর তথ্য দিয়েছেন তিনি।

শিপ্রা বলেছেন, এই ঘটনাটি তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও তিনি এ হত্যাকাণ্ডের বিচার দেখে যেতে চান। ন্যায়বিচার পেতে তিনি শেষ পর্যন্ত লড়তে চান। শিপ্রা একটু স্বাভাবিক হলে তাকে বিশদভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে তিনি জানান।

অন্যদিকে টেকনাফে দীর্ঘদিনের পুলিশি অপকর্মের তথ্য পুলিশ পরিদর্শক হুমায়ূন কবিরের কাছে রয়েছে বলে তিনি (হুমায়ূন) নিজেই দাবি করেছেন। হুমায়ূন দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজার ডিবি পুলিশের ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি এখন নোয়াখালী ইনসার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারে কর্মরত। ফেনীর সোনাগাজী, ফুলগাজী এবং লক্ষ্মীপুরের দু’টি থানাতেও ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। সম্প্রতি কক্সবাজারের সার্বিক বিষয় নিয়ে হুমায়ূন পুলিশের আইজির সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন। তিনি আইজিপির সঙ্গে দেখা করতে পারলে সিনহা হত্যাকাণ্ডের মতো মর্মান্তিক ঘটনা ঘটত না বলে এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেন।

এক প্রশ্নের জবাবে লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানান, সিনহা হত্যার মামলাটি র‌্যাবে আসার পর প্রাথমিকভাবে আমরা সব আসামিকে (কারাগারে আত্মসমর্পণ করা ৭ আসামি) ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন জানাই।

তিনজনকে ৭ দিন করে রিমান্ডে নেয়ার অনুমতি দেন। ১০ কর্মদিবসের মধ্যে ওই রিমান্ড কার্যকরের আদেশ দেন।

অন্য চারজনকে দুই দিনের জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। আমরা চারজনকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও রিমান্ড কার্যকর করতে এখনও কাউকে আমাদের হেফাজতে নেইনি।

কারণ সিফাত এবং শিপ্রা হলেন আমাদের মামলার মূল সাক্ষী। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ না করে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সঠিক তথ্য উদঘাটনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হতে পারে।

এখন যেহেতু দু’জনই জামিন পেয়েছেন (একজন রোববার, অপরজন সোমবার) তাই তাদের আগে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এরপর আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এ কারণে ১০ কর্মদিবসের মধ্যে রিমান্ড মঞ্জুর হওয়াদের রিমান্ড কার্যকর করা সম্ভব হচ্ছে না।

তাই সোমবার আদালতে ওই ট্রাইফ্রেমটি বাতিল করার আবেদন করেছি। আদালত তা মঞ্জুর করেছেন। এখন যে কোনো সময় তাদের র‌্যাব হেফাজতে নিয়ে রিমান্ড কার্যকর করা যাবে।

এছাড়া অপর চার আসামিকে (যাদের জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে) ফের ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন জানানো হয়েছে। আশা করছি আদালত বুধবার এ বিষয়ে একটি আদেশ দেবেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ১৮ জানুয়ারি বাহারছাড়া তদন্ত কেন্দ্রে যোগদান করেন ইন্সপেক্টর লিয়াকত হোসেন। ওসি প্রদীপের প্রশ্রয়ে নিজেও এলাকায় গড়ে তোলেন শক্তিশালী সিন্ডিকেট।

গত ২৫ এপ্রিল তিনি মানব পাচারের অভিযোগে নোয়াখারীপাড়া গ্রামের আবদুল হাকিমের ছেলে আবদুস সালামকে তুলে আনেন। এরপর ওই পরিবারের কাছ থেকে সাড়ে আট লাখ টাকা নেন।

কিন্তু ২৬ এপ্রিল তিনি সালামকে বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যা করেন বলে পরিবারের অভিযোগ। এ ঘটনার পর এলাকার সবাই লিয়াকত ভয়ে তটস্থ থাকতেন।

স্থানীয় শামলাপুর দক্ষিণ ঘাটের সভাপতি বেলাল উদ্দিন বলেন, আমরা প্রতি ঘাট থেকে পুলিশের জন্য খরচ দিতাম। শুরুতে ঘাটপ্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা করে দেয়া হতো। কিন্তু এতে সন্তুষ্ট ছিলেন না লিয়াকত ও তার সহযোগীরা।

টাকা কম হওয়াতে মা-বোন ধরে গালিগালাজ করতেন। পরে টাকা বাড়িয়ে দেয়া হয়।

স্থানীয় একটি ফিশারিজ ঘাটের নৌকার মালিক রাশেদুল আলম জানান, তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত হওয়া ইনচার্জ লিয়াকত দায়িত্বে থাকাকালে পুলিশের খাবারের কথা বলে আমার কাছ থেকে টাকা ছাড়াই মাছ নিতেন।

যত মাছ নিতেন এত মাছ তাদের প্রয়োজন হতো না। মাছ জমা করে ক্যাশিয়ার মামুনের মাধ্যমে সেগুলো বিক্রি করতেন লিয়াকত। তিনি জানান, শামলাপুর বাজারে ৩০টি মাছের আড়ত রয়েছে।

এসব আড়তে প্রতিদিন ৩০-৫০ জন ব্যবসায়ী মাছ কিনতে আসেন। এসব ছোট মাছ ব্যবসায়ী থেকে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা থেকে চাঁদা নিতেন।

চাঁদা না দিলে মাছের ভেতর ইয়াবা রয়েছে বলে মাছ রাস্তায় ছিটিয়ে দেয়াসহ নানাভাবে হয়রানি করতেন। সেই সঙ্গে ব্যবসায়ীদের ফাঁড়িতে নিয়ে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে আদায় করতেন লিয়াকত।

শামলাপুরের টমটম চালক সরওয়ার কামাল জানান, প্রত্যেক টমটম গাড়ি থেকে মাসে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা চাঁদা নিতেন লিয়াকত। করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউন চলাকালে ৫০০ টাকার জন্য আমার গাড়ির সামনের গ্লাসটি ভেঙে ফেলেন পরিদর্শক লিয়াকত।

এরপর টাকা নিয়েই তিনি গাড়িটি ছেড়েছেন। শুধু তাই নয়, গ্রাম্য সালিশ থেকেও হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিতেন লিয়াকত ও তার সহযোগীরা।

গত ৩১ আগস্ট রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা রাশেদ খান।

এ ঘটনায় চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে প্রধান করে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন ও নিরাপত্তা বিভাগ।

তদন্তের স্বার্থে টেকনাফের বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ লিয়াকত হোসেনসহ ১৬ পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে সিনহা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি মামলা করে র‌্যাব।

৫ আগস্ট বুধবার কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন মেজর সিনহার বড়বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস।

এই মামলায় ৭ পুলিশ সদস্য আত্মসমর্পণ করেন। তারা এখন কারাগারে আছেন। তাদের র‌্যাব হেফাজতে নিয়ে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের প্রস্তুতি চলছে।

যুগান্তরের সোনাগাজী (ফেনী) প্রতিনিধি জানান, পুলিশ পরিদর্শক মো. হুমায়ূন কবিরকে বাদ দিয়ে কার ইশারায় প্রদীপ যোগদান করেছিলেন টেকনাফ থানায়?

এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেড়াচ্ছেন পুলিশ পরিদর্শক মো. হুমায়ূন কবির। কক্সবাজার ডিবিতে কর্মরত থাকা অবস্থায় ২২ মাসের নানা অজানা তথ্য রয়েছে তার কাছে।

মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ হত্যার কয়েক দিন আগে হুমায়ূন কবির নিজে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। স্ট্যাটাসে তিনি বেশকিছু প্রশ্ন তুলে ধরেছেন।

সেগুলো হল- ক. ২২ মাস আগে টেকনাফ থানায় ওসি হিসেবে যোগদান করার কথা ছিল কার? খ. কাদের আশীর্বাদে প্রদীপের রাতারাতি নাটকীয়ভাবে মহেশখালী হতে টেকনাফে যোগদান?

গ. তার চাকরির খতিয়ান কার অজানা আছে? ঘ. এসআই থেকে ইন্সপেক্টর পর্যন্ত প্রদীপ কতবার কক্সবাজারে? ঙ. শুধু কক্সবাজার-সিএমপি-কক্সবাজার কেন হবে তার চাকরির ক্ষেত্র?

চ. কক্সবাজার ও সিএমপিতে এক প্রদীপ কতবার ডুবিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশের ইমেজকে? ছ. সাধারণ জনগণ যা জানেন তা কি তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অজানা ছিল?

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published.

© All rights reserved © 2017-2023 Jagannathpurnews.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com