শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩২ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার :: সুনামগঞ্জের শষ্যভান্ডার খ্যাত জগন্নাথপুরের হাওর গুলোর বোর ফসল নিয়ে কৃষকদের দুশ্চিন্তার যেন শেষ নেই।
বালুমাটি দিয়ে নিম্ন মানের বেড়িবাঁধ সামান্য বৃষ্টিতেই ধ্বসে পড়ছে। ভারতের চেলাপুঞ্জি থেকে নেমে আসা কদিনের পাহাড়ী ঢলে স্হানীয় নলজুর নদী পানিতে ভরে হাওরের বেড়ীঁ বাঁধ গুলোতে চাপ সৃষ্টি করছে। যে কোন সময় বাঁধ গুলো ভেঙে যাওয়ার আশংকা করছেন স্হানীয় কৃষকগণ।
এলাকার অনেক কৃষকের অভিযোগ, সময়মত উপযুক্ত বেড়িবাঁধ না করে মেয়াদের শেষদিকে তাড়াহুড়া করে দায়সারাভাবে সরকারী নীতিমালা বহির্ভূত ভাবে বালুমাটি দিয়ে নিম্নমানের বেড়ীঁ বাঁধ করা হয়। বৃষ্টি ও অকাল বন্যায় বাঁধ গুলো ধ্বসে হাওরে পানি ঢুকার উপক্রম হচ্ছে । এখানে নামমাত্র কাজ করে মোটা অংকের টাকা লুটপাট করা হয়। কোন জবাবদিহিতা না থাকায় এগুলো নিয়মে পরিনত হয়েছে ।
জগন্নাথপুরে বোরো ফসলরক্ষা ৩টি বেড়িবাঁধ ধসে পড়েছে। ফলে হাওরের ফসল নিয়ে শঙ্কায় আছেন স্থানীয় কৃষকরা। স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ নিন্মমানের কাজ করায় সামান্য বৃষ্টিতে বাঁধ ধসে পড়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, নলুয়া হাওরের ফোল্ডার ৫এর আওতাধীন ভুরাখালী সংলগ্ন বেড়ীঁ বাধের কাজ হয়েছে খুবই নিম্ন মানের। এখানে দায়সারাভাবে মাটি ফেলা হয়েছে। বাঁধে কম্পেকশন ও দূর্বাঘাস লাগানো হয়নি। পিআইসির সভাপতি হচ্ছেন- ছাত্রলীগ নেতা জহিরুল। ১হাজার মিটার বাধেঁ বরাদ্দকৃত টাকা ১৬ লাখ টাকা। ইতিমধ্যে ৩কিস্তিতে ৭লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে । পাহাড়ী ঢলের পানির চাপে বাধঁ টি খুবই ঝুকিঁরর মধ্য রয়েছে।
জহিরুল জানান,তিনি ক্ষতিগ্রস্হ বাধেঁ মাটি ভরাটের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
মঙ্গলবার স্হানীয় পিংলার হাওরের বাধেঁ ফাটল ধরেছে বলে মাইকে ঘোষনা দিলে জগন্নাথপুর গ্রামের কৃষকরা স্বেচ্ছা শ্রমে বাধঁ মেরামতের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
নলুয়া হাওরের পোল্ডার—১ এর আওতাধীন মইয়ার হাওরের কলইকাটা নামক স্থানে ১৬ ও ১৭ নম্বর প্রকল্পের প্রায় ৩০ ফুট বাঁধ দেবে গেছে।
জানাযায়, জগন্নাথপুর উপজেলায় এবার সাড়ে তিন কোটি টাকা বরাদ্দে ২৮টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির মাধ্যমে ১৫ কিলোমিটার ফসল রক্ষা বেড়িবাঁধের কাজ করা হচ্ছে। এরমধ্যে ১৬ নং প্রকল্পে বরাদ্দ ১৩ লাখ টাকা এবং ১৭ নং প্রকল্পের বরাদ্দ ২০ লাখ টাকা।
গত কয়েক দিনের বৃষ্টি তে মই, নলুয়া ও পিংলার হাওরের ফসল রক্ষার ৩টি বেড়িবাঁধ ধসে যায়।
অধিকাংশ বেড়ীঁ বাধ বালুমাটি দিয়ে দায়সারাভাবে করা হয়েছে । বাধঁ গুলো খুবই নিম্ন মানের হওয়ায় স্হানীয় কৃষকদের দুশ্চিন্তার যেন শেষ নেই।
এরআগেও ওই স্থানে আরও কয়েকবার মাটি ধসে পড়ে বলে স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন। কৃষকরা জানালেন, বাঁধ ভেঙে গেলে নলুয়া,পিংলা ও মই হাওরের পুরো ফসল পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। হাওর বাঁচাও আন্দোলন জগন্নাথপুর উপজেলা কমিটির আহবায়ক সিরাজুল ইসলাম জানান, হাওরের বেশ কয়েকটি বেড়িবাঁধে বালুমাটি ব্যবহার করা হয়েছে।কমপ্রেকশন ও দূর্বা ঘাষ লাগানোর কথা থাকলেও এগুলো করা হয়নি।
নামমাত্র মাটি ফেলে ব্যাপক কারচুপির মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা লুটপাট করা হচ্ছে।
নলুয়া ও মই হাওর পাড়ের ছিলাউরা হলদিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বকুল যুগান্তর কে জানান, আমি হাওরের বেড়ীঁ বাধঁ পরিদর্শন করে দেখেছি অধিকাংশ বাধঁ ই দায়সারাভাবে বালুমাটি দিয়ে করা হয়েছে। বাধঁ গুলোতে কম্পেকশন ও দূর্বাঘাস লাগানোর কথা থাকলে ও এগুলো করা হয়নি। বাধঁ গুলো খুবই ঝুকিঁর মধ্যে রয়েছে। প্রতিবছরের মত এবারও নিম্নমানের কাজ করে মোটা অংকের টাকা লুটপাট করা হচ্ছে।
১৬ নং প্রকল্পের সভাপতি বিপ্লব চন্দ্র দাস বলেন, আমার বেড়িবাঁধ সামান্য অংশ ধসে গেছে। আমি সংস্কার কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
১৭ নং প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি খলিলুর রহমান বলেন, আমার প্রকল্পের বেড়িবাঁধটি একটি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। এখানে একটি গর্ত রয়েছে। মাটি টিকছে না ফলে ধসে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আমি সংস্কার কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের জগন্নাথপুরের দ্বায়িত প্রাপ্ত উপ সহকারী প্রকৌশলী হাসান গাজী বলেন, যে বাধঁ গুলো ধসে যাচ্ছে আমরা দ্রুত মেরামতের চেষ্টা করছি।
মঙ্গলবার দুপুরে জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা সাজেদুল ইসলাম যুগান্তর কে জানান, ক্ষতিগ্রস্ত বাধঁ গুলো মেরামতের কাজ চলছে। আমরা সার্বক্ষণিক তদারকি করছি।
Leave a Reply