শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:৫১ পূর্বাহ্ন
আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক :: নভেল করোনা ভাইরাসের (কভিড-১৯) উৎপত্তি নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণা প্রকাশের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে চীন সরকার। দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের এক নির্দেশনায় এই নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। চীনের দুটি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে এ বিষয়ে নোটিশ প্রকাশ করেছিল। তবে পরবর্তীতে নোটিশগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এ খবর দিয়েছে সিএনএন।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সরিয়ে ফেলা নোটিশগুলো অনুসারে, চীন সরকারের নতুন নীতিমালা অনুসারে, কভিড-১৯ নিয়ে সকল প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণা এখন থেকে প্রকাশের পূর্বে খতিয়ে দেখবেন সরকারি কর্মকর্তারা। ভাইরাসটির উৎপত্তি নিয়ে করা সকল গবেষণাপত্র অতিরিক্ত নীরিক্ষার মধ্য দিয়ে যাবে। সেগুলো সরকারি কর্মকর্তারা নীরিক্ষা শেষে অনুমোদন দিলে তবেই প্রকাশ করা হবে।
সিএনএন জানিয়েছে, গত ২৫শে মার্চ রাষ্ট্রীয় পরিষদের একটি টাস্কফোর্সের বৈঠকে নেয়া সিদ্ধান্তের উপর ভিত্তি করে এ বিধিনিষেধ জারি হয়েছে। গত শুক্রবার সাংহাইয়ের ফুদান ইউনিভার্সিটি প্রথম তাদের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি নোটিশ জারি করে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তারা জানান যে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগ থেকে এ বিষয়ে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে নোটিশটি প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে ফেলা হয়। তবে এর একটি ‘ক্যাশড সংস্করণ’ এখনো প্রবেশযোগ্য রয়েছে।
চীন সরকারের নতুন এই বিধিনিষেধ করোনা ভাইরাস নিয়ে মতামত নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বর্ণনা করেছে সিএনএন। গত ডিসেম্বরে চীনের উহান থেকে এই ভাইরাসটির উৎপত্তি বলে ধারণা করা হয়। বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস, উহানের এক বন্যপ্রাণী বেচাকেনার বাজার থেকেই ভাইরাসটি মানবদেহে বিস্তার লাভ করেছে। এখন পর্যন্ত এতে আক্রান্ত হয়েছেন ১৮ লাখের বেশি মানুষ। মারা গেছেন ১ লাখ ১৪ হাজারের বেশি।
সিএনএন জানায়, গত জানুয়ারি থেকে কভিড-১৯ নিয়ে ধারাবাহিকভাবে বেশ কয়েকটি গবেষণা প্রকাশ করেছে চীনা বিজ্ঞানীরা। এসব গবেষণায় ভাইরাসটির মানবদেহে সংক্রমণ, মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণ সহ নানা বিষয় উঠে এসেছে। সেসব গবেষণায় প্রকাশিত তথ্যের সঙ্গে চীনের সরকারি বক্তব্যের পার্থক্য রয়েছে। এতে ভাইরাসটি নিয়ে সরকারি বক্তব্য প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
নাম না প্রকাশের শর্তে এক চীনা গবেষক জানিয়েছেন, সরকারের নতুন এই বিধিনিষেধ ভাইরাসটি নিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা বিঘ্নিত হবে। তিনি বলেন, আমি মনে করি এটা ভাইরাস নিয়ে তথ্য নিয়ন্ত্রণে চীন সরকারের একটি সমন্বিত প্রচেষ্টা। ভাইরাসটির উৎপত্তি চীনে হয়নি এমন দাবি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা। তিনি জানান, বিধিনিষেধগুলো কয়েকদিন আগে জারি করা হয়েছে। এ ব্যাপারে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে সাড়া পায়নি সিএনএন।
বিধিনিষেধগুলো চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগ থেকে এক নির্দেশনার মাধ্যমে জারি করা হয়। নির্দেশনা অনুসারে, এখন থেকে কভিড-১৯ এর উৎপত্তি নিয়ে সকল প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণাপত্র প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কমিটির কাছে যাবে। সেখান থেকে নীরিক্ষা শেষ হওয়ার পর সেগুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগে পাঠানো হবে। সেখান থেকে গবেষণাপত্রগুলো পাঠানো হবে সরকার থেকে নিয়োজিত রাষ্ট্রীয় পরিষদের কাছে। পরিষদের কাছ থেকে নীরিক্ষা শেষে প্রকাশের অনুমতি দিলে তবেই গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা যাবে।
এছাড়া, কভিড-১৯ নিয়ে অন্যান্য গবেষণা প্রকাশের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কমিটি। এক্ষেত্রে, কমিটি গবেষণাটি প্রকাশের একাডেমিক গুরুত্ব ও প্রকাশের সময় সহ নানা বিষয় বিবেচনা করবে।
Leave a Reply